ধনাঢ্য তরুণীদের টার্গেট করতেন লেডি বাইকার এশা

৩ সপ্তাহ আগে
খুলনার লেডি বাইকার ইরিন জাহান এশার টার্গেট ছিল ধনী বাবার মেয়েরা। টার্গেট করে মেয়েদের নেশাগ্রস্ত করতেন তিনি। শুধু তাই নয়, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজেও জড়িয়ে ফেলতো। এক নারীকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।

সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত মিজানুর রহমান প্রাথমিক তদন্তে এসব বিষয় পেয়েছেন বলে জানান।


মাদক সেবন করিয়ে এক তরুণীকে নির্যাতনের অভিযোগে খুলনার আলোচিত নারী মোটরসাইকেল প্রশিক্ষক লেডি বাইকারখ্যাত ইরিন জাহান এশা ওরফে এশা শেখকে এর আগে শনিবার মধ্যরাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার ( ২৩ মার্চ)  দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।


লেডি বাইকার এশা ছাড়াও তার ভাই মো. খালিদ হাসানকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা থানায়  মামলা করেছেন।


পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই তরুণীর বাবা ফ্রান্স প্রবাসী। দীর্ঘ ১০ বছর ফ্রান্সে থাকাকালীন ইরিন জাহান এশা শেখ বাদীর মেয়ের (১৭) সঙ্গে বান্ধবী সুলভ আচরণ করে দীর্ঘদিন ধরে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করিয়ে নেশায় আসক্ত করে ফেলে। তিনি বিভিন্ন সময় তার বাসায় ওই তরুণীকে ডেকে নিয়ে মাদকদ্রব্য সেবন করাতো। তরুণীর বাবা তাকে একাধিকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও সে নিষেধ অমান্য করে ওই তরুণীকে ডেকে নিয়ে যেতেন। বাদীর মেয়ে অতিরিক্ত নেশাদ্রব্য সেবন করে তাদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করে। এমনকি মাদক সেবন করতে না পারলে তিনি বিভিন্ন সময় বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করতেন মেয়েটি।


বাধ্য হয়ে তরুণীর বাবা শনিবার (২২ মার্চ) দিবাগত রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় মেয়েকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করার উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হয় পরিবার। বাড়ির সামনে লেডি বাইকার এশাসহ অন্যান্য আসামিরা মোটরসাইকেলে এসে তাদেরকে অনুসরণ করতে থাকে। রাত সোয়া ১২টার দিকে বাংলাদেশ বেতার ভবনের সামনে পৌঁছালে আসামিরা মোটরসাইকেলযোগে বাদীর অ্যাম্বুলেন্সের সামনে এসে গতিরোধ করে। অ্যাম্বুলেন্স থামার পর জোরপূর্বক অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে প্রবেশ করে বাদীর মেয়ের হাত ও কাপড় ধরে টানাহেঁচড়া করে তাকে নেওয়ার চেষ্টা করে।


আরও পড়ুন: গাড়ির লুকিং গ্লাস ভেঙে ১২০ কিমি গতিতে পালালেন বাইকার


আসামিদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে করতে আসামি ইরিন জাহান এশা শেখ ও তার ভাই মো. খালিদ হাসান অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার টান দিয়ে শিববাড়ি মোড়ে পৌঁছায়। শিববাড়ি পৌঁছানোর পর বাদীর ডাক-চিৎকার শুনে সেখানে দায়িত্বরত নৌ-বাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে এসে আসামিদের ও বাদী এবং তার মেয়েকে হেফাজতে নেয়। এরপর নৌ-বাহিনীর সদস্যরা ঘটনার বিষয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। নৌ-বাহিনীর সদস্যরা আসামিদের থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে এবং বাদীর মেয়েকে বাদীর নিকট বুঝিয়ে দেয়।


নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, এশা মোটর সাইকেল প্রশিক্ষণের সঙ্গে তরুণীদের মধ্যে মাদক সরবরাহ করতো। শনিবার এক মেয়েকে মাদক সেবন করিয়ে নির্যাতনের ফলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তার পরিবারের সদস্যদের খবর দিলে তারা তরুণীকে নিয়ে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে রওনা দেয়। পথে তরুণীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এশা তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় নৌবাহিনীর একটি টহল টিম তাকে আটক করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদি হয়ে মামলা করেছেন। রোববার এশাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।


পুলিশ জানায়, বিভিন্ন সময় ওই মেয়ের সঙ্গে মিশতে নিষেধ করলে লেডি বাইকার ইরিন জাহান এশা শেখ বাদীকে ভয়ভীতি দেখাতো ও হুমকি দিত। ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ ঘটনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে, যা যাচাই-বাছাই চলছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন