দেশের কূটনৈতিক মানচিত্রে ‘নীরব প্রতিযোগিতা’, কী বলছেন বিশ্লেষকরা?

৩ দিন আগে
বাংলাদেশের কূটনৈতিক মানচিত্রে যেন নীরব প্রতিযোগিতা চলছে। ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকার কাছাকাছি কারা থাকবে? প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কূটনীতিকদের বৈঠক হচ্ছে সরকার, রাজনৈতিক দল কিংবা সুশীল সমাজের সঙ্গে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চব্বিশের ৫ আগস্টের পর বড় পরিবর্তন এসেছে কূটনীতিক পাড়ায়। সবাই মরিয়া নিজেদের স্বার্থ রক্ষায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, নয়া পরিস্থিতিতে সবার তৎপরতাই নজরে আছে। জাতীয় স্বার্থকেই গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

চীনা দূতাবাসের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর রাষ্ট্রদূত ইয়েন ওয়াও প্রায় দেড়শোর বেশি পাবলিক ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন। সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। বেশ কয়েকবার বসেছেন বিএনপির সঙ্গে।

 

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ছাড়াও দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বেশ কয়েকবার। এর বাইরে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও বৈঠক করেছে।

 

পেশাজীবী ফোরামের সঙ্গেও বেশ কয়েকবার বসেছেন তারা। ২০টি দ্বিপাক্ষিক ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে দুই দেশের গণমাধ্যমকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা দেশটি সফর করেছেন। বলা যায়, যেকোনো সময়ের চেয়ে সরব চীনা দূতাবাস।

 

বিপরীতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সব সময় সরব থাকা যুক্তরাষ্ট্র যেন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। প্রায় দেড় বছর ধরে ঢাকায় নেই দেশটির রাষ্ট্রদূত। কাজ করছেন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যানজ্যাকেবসন। পট পরিবর্তনের পর হাতেগোনা কিছু কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তিনি। মার্কিন দূতাবাসের এত কম তৎপরতা গত দুই দশকে দেখা যায়নি।

 

আরও পড়ুন: ঢাকার সাতটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি বিএনপি, কী বলছেন নেতারা

 

এদিকে, গত দেড় দশকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যতটা উচ্চতায় ছিল, ৫ আগস্টের পর তা ততটাই তলানীতে। শেখ হাসিনা ইস্যুতে অনেকটা মুখ দেখাদেখি বন্ধ হওয়ার মতো। থাইল্যান্ডে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ ও একটি এফওসির বাইরে আর কোনো বৈঠক হয়নি। তবে থেমে নেই বাকযুদ্ধ।

 

ঠিক এর বিপরীত চিত্র পাকিস্তানের সঙ্গে। সম্পর্কোন্নয়নে দিপাক্ষিক যোগাযোগ ও বৈঠক বেড়েছে গত ৫ বছরের তুলনায় ৫ গুণ। ৫ আগস্টের পর বৈঠক হয়েছে প্রায় ৮০টি। এর মধ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বৈঠক হয়েছে তিনবার। যেখানে ৫ আগেস্টর আগে গত ৬ বছরে হয়েছে ১৬টি বৈঠক।

 

পিছিয়ে নেই মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাশালী দেশ তুরস্কও। গত দেড় বছরে দুটি এফওসি, মন্ত্রী পর্যায়ের সফর। প্রতিরক্ষা খাতেও দুই দেশের স্বশস্ত্র বাহিনীর যোগাযোগ বেড়েছে বহুগুন। আলোচনায় এসেছে আছে ড্রোন তৈরির কারখানাও।

 

বিশ্লেষকরা একে ডিপ্লোম্যাটিক প্যারাডাইম শিফট বলছেন। তাদের মতে, বিশ্ব এখন বহুমেরুতে বিভক্ত। সবার চেষ্টা, ঢাকায় নিজের হিস্যা নিশ্চিত করা।

 

বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, 

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর নতুন বাস্তবতায় যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে চীন। একইসঙ্গে অন্যান্য দেশগুলোও নতুন বাস্তবতার আলোকে তাদের অগ্রাধিকারগুলো সেট করেছে। সেখানে আমরা আলোচনার জন্য চেষ্টা করছি। এখানে তুলনা করার চেয়ে অগ্রাধিকারগুলো কীভাবে কনভারজেন্স হচ্ছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘এক সময় এক দিকে ঝুঁকে যাওয়ার যে প্রবণতা ছিল, সেটা আর সম্ভব না। কারণ পুরো পৃথিবীর কাঠামোটা মাল্টি পোলারের দিকে চলে যাচ্ছে।’

 

আরও পড়ুন: সমঝোতার আসন পেতে মুখিয়ে শরিক দল, নিজ প্রতীকে ভোট নিয়ে জটিলতায় বিএনপি!

 

অনেকেই মনে করেন, সরকারের সঙ্গে বেশি সখ্যের কারণে আগের মতো দৃশ্যমান তৎপরতায় নেই যুক্তরাষ্ট্র। তবে সাবেক কূটনীতিক মুন্সি ফয়েজ আহমেদ মনে করেন, জো বাইডেন না থাকায় দুপক্ষেই কিছুটা দূরত্ব বেড়েছে।

 

সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, 

যুক্তরাষ্ট্রের আগের সরকার থাকলে এক রকম হতে পারত। কিন্তু ট্রাম্পের কারণে এ সম্পর্কটা আর আগায়নি, বরং এটা থেমে গেছে। নতুন করে শুরু করার চেষ্টাও হয়ত হয়েছে। কিন্তু খুব অগ্রগতি দেখি না।  

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাহবুবুল হক জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশের স্বার্থকেই অনুসরণ করছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন