পদ্মাপাড়ের মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার সাতঘরিয়ার ডাচ ডেইলি ফাম নামে একটি খামারে অতি যত্নে বেড়ে উঠেছে ‘রাজা বিক্রমপুর’। খামারিদের দাবি, এ বছর এটিই বেলজিয়াম ব্লু জাতের সবচেয়ে বড় ষাঁড়। বিদেশি জাতের হলেও দেশীয় খাবার ও অর্গানিক পদ্ধতিতে পালন করা হয়েছে রাজকীয় এই ষাঁড়টিকে।
খামারে ষাঁড়টির দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মী মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমরা একেবারে বাচ্চা বয়স থেকে ‘রাজা বিক্রমপুরকে’ লালন-পালন করছি। কোনো প্রকার হরমোন বা কৃত্রিম কিছু খাওয়ানো হয়নি। ঘাস, খৈল, ভুসি আর ভুট্টা– সব দেশীয় খাবারেই গরুটি বড় হয়েছে। স্নেহে আর যত্নে মানুষ যেমন সন্তান বড় করে, তেমনি আমরাও তাকে বড় করেছি।’
ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের এখানকার খামারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ও পশুর সুরক্ষা নিয়ে কঠোর নজরদারি রাখা হয়। ‘রাজা বিক্রমপুরের’ মতো পশুগুলো নিয়মিত আমাদের তত্ত্বাবধানে থাকে। শুধু আকারে বড় হলেই চলবে না— এদের সুস্থতা, সঠিক বয়স, রোগমুক্ত অবস্থা নিশ্চিত করাটাই মূল বিষয়। পশু কল্যাণ নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: এবার কোরবানির হাট কাঁপাবে বিশাল দেহের রাজা-বাদশা, দাম কত?
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই কোরবানির ঈদের তিনটি ক্যাটাগরিতে পশু বিক্রি করছি। যেগুলোর ওজন ৪০০ কেজির মধ্যে আছে সেগুলো ৫৭০ টাকা লাইভ ওজনে বিক্রি করছি। আর যেই পশুগুলো ৪০০-৫০০ কেজি ওজনের সেগুলো বিক্রি করছি ৬০০ টাকা কেজি দরে। আর যেগুলো ৫০০ কেজি ওপরের সেগুলো আমরা ঠিকা হিসেবে বিক্রি করছি। আমাদের গরু লালন পালনের জন্য তিনজন চিকিৎসক সার্বক্ষণিক কাজ করছি। এজন্য আমাদের গরুগুলো অন্যান্য গরুর থেকে আলাদা। আমাদের এই খামারে বিশেষত্ব হচ্ছে আমরা গরু লালন পালনের জন্য তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি। জেনেটিক, কাউ কমফোর্ট ও নিউট্রিশন। এই তিনটি বিষয় সমন্বয় করে গরু লালন পালন করা হয়ে থাকে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম জানান, কোরবানির জন্য জেলায় এ বছর চাহিদা রয়েছে ৬৯ হাজার ৭৭০টি পশুর। প্রস্তুত রয়েছে ৮১ হাজার ৭৭৫টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৫৯ হাজার ৮৭৭টি। এরমধ্যে ঐতিহ্যবাহী মিরকাদিমের ধবল গাই রয়েছে ২০০টির মতো।
আরও পড়ুন: দেশের সবচেয়ে বড় গরু ৫৪ মণের ‘মানিক’!
খামার মালিক ও কর্মীরা জানান, পদ্মা তীরের ওই খামারে মোট দুই হাজার গরুর মধ্যে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩০০টির বেশি। এর মধ্যে দেশি-বিদেশি নানান জাত রয়েছে। বেলজিয়াম ব্লু ছাড়াও ইউরোপীয় লিমোজিন ও ষাঁড়, পাকিস্তানি শাহীওয়াল, ব্রাজিলের ঘির, নেপালের গির, ভুটানের ভুট্রি, অস্ট্রেলিয়ান অলেস্ট্রিন ফিজিয়াম এবং দেশি রেডচিটাগাং ও মিরকাদিমের ধবল গাই সবই রয়েছে।
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে কোরবানির পশু পালনকে খামারিরা দেখছেন নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে। আর তাই পশুর স্বাস্থ্যের পাশাপাশি বাড়তি যত্নেও কোনো কমতি রাখছেন না তারা।