দেড় কিলোমিটারে নড়বড়ে ৫ সাঁকো, সরু রাস্তায় চলা দায়

১ সপ্তাহে আগে
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে দেড় কিলোমিটার একটি সড়কের পাঁচটি স্থানেই নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। বন্যার ভাঙনে গ্রামীণ জনপদের এই মাটির সড়কটি এখন সরু হয়ে পড়েছে। বিকল্প সড়ক না থাকায়, এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীসহ এ জনপদের সহস্রাধিক মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুরে কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বারপাড়া থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত গ্রামীণ সড়কটির এখন বেহালদশা। ভাঙাচোরা দেড় কিলোমিটার এই সড়কের ৫টি স্থানে রয়েছে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো; যা পাড়ি দিয়ে চলাচল করে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের হাজারো মানুষ।


গেল আগস্ট মাসে আকস্মিক বন্যায় দেড় কিলোমিটারের সড়কটির ৫টি স্থান ভেঙে খালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়কটির প্রায় ৯০ শতাংশ অংশ। এতে উপজেলা শহরের সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে সংস্কার করে সড়কের ৫টি স্থানে সাঁকো নির্মাণ করেন।


জীবন-জীবিকার তাগিদে এই সড়ক ব্যবহার করেই চলাচল করতে হয় বাসিন্দাদের। কিন্তু কৃষিপণ্য ও মালামাল নিয়ে যাতায়াতে ভোগান্তি হয় প্রতিদিন। আর বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও রোগীরা।


এ দিকে দেড় কিলোমিটার এ সড়কটির পাশে রয়েছে কে আলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জনতা বাজার মইনুল ইসলাম কওমি মাদ্রাসা, মানিকগঞ্জ বাজার দারুস সালাম মাদ্রাসা ও একটি বালিকা বিদ্যালয়। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।


আরও পড়ুন: ব্রিজের পিলার দেখেই কেটে গেল ৪ বছর!


স্থানীয়রা জানান, জোয়ার এলেই ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হতে হয় তাদের। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এতে বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকিও। এ অঞ্চলের বেশির ভাগই কৃষিজীবী, মৎস্যজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষ। নদীতে জোয়ার না থাকলে খাল পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করেন তারা।


জোয়ার এলেই ঝুঁকি নিয়ে কৃষিপণ্য ও মালামাল নিয়ে সাঁকো পারাপার হতে গিয়ে খালের পানিতে পড়ে প্রায়ই নষ্ট হচ্ছে তাদের মূল্যবান মালামাল। আবার জরুরি কোনো সেবা কিংবা গুরুতর রোগী নিয়ে পড়তে হয় চরম বিপাকে। উপায় না পেয়ে নৌকা দিয়েও রোগীদের সময়মত হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এমন নির্মম বাস্তবতায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এ ছাড়া সড়কটি দিয়ে পার্শ্ববর্তী চরকালকিনি ইউনিয়নেরও কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। এমতাবস্থায় সড়কটি মেরামতসহ প্রয়োজনীয় স্থানে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

 

বন্যার ভাঙনে সুরু হয়ে গেছে মাটির সড়কটি, চলাচলে ভোগান্তিতে এই জনপদের মানুষ।

 

স্থানীয় রহিমা বেগম বলেন, ‘রাস্তা-ঘাট না থাকায় সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার সন্তানদের নিয়ে আসা-যাওয়ায় তাদের খুব কষ্ট হয়। রাস্তা না থাকায় এখন গাড়ি-ঘোড়াও চলাচল করে না। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে সময়মতো হাসপাতালে যাওয়াও সম্ভব হয় না। এতে মনে হচ্ছে দেখার মতো যেন কেউ নেই।’


 মেম্বারপাড়া এলাকায় বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ আবদুর রহিম বলেন, ‘মেম্বারপাড়া থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এই সড়কে এখন পাঁচটি সাঁকো হইছে। রাস্তাটির কয়েকটি স্থান ভেঙে খালে বিলীন হয়ে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে আমরা কোনো কিছু আনা-নেয়া করতে পারি না, চলতে পারি না, আমাদের খুব কষ্ট।’


আরও পড়ুন: বিজিবি ছাত্র-জনতার সাঁকো নির্মাণ, দুর্ভোগ কমল ৮ গ্রামের মানুষের


তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের কষ্ট দেখার মতো যেন কেউ নেই।’


একই এলাকার মফিজ মিয়া বলেন, ‘আমরা কৃষি কাজ করে সংসার চালাই। ওই রাস্তা ও সাঁকোর কারণে আমাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বাজারে দিকে যেতে পারি না, বেচা-কেনা করতে পারি না। ছেলে-মেয়েরা স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে পারে না। আমাদের খুব কষ্ট করে চলাফেরা করতে হয়।’


মানিকগঞ্জ বাজার এলাকায় ব্যবসায়ী হুমায়ন কবির দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই সড়কের প্রায় ৯০ শতাংশ ভেঙে পড়লেও দেখার মতো যেন কেউই নেই। গত ৭-৮ মাস থেকে এই অবস্থায় পড়ে আছে সড়কটি। অথচ এই সড়ক দিয়ে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ চলাচল করেন। সড়ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দোকানের মালামাল আনা-নেয়া করতে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। এই অবস্থায় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।


স্কুল-মাদ্রাসাগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানান, সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। অনেক সময় হাত থেকে বই-খাতা পড়ে পানিতে ভিজে নষ্ট হয়। মাঝে মাঝে নিজেরাও সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। এই কারণে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে মন চায় না তাদের।


আরও পড়ুন: জিকের প্রধান খালের উপর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো


চর কালকিনি কে আলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ও যাতায়াতে ঝুঁকি থাকার কারণে বিদ্যালয়ে দিনদিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ঝুঁকি থাকায় অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠান না। রাস্তাগুলো মেরামত করা হলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করেন এই শিক্ষক।’


কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল হোসেন (আবু) বলেন, ‘সড়কটি বিভিন্ন স্থান ভেঙে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। রাস্তাটির কারণে চর মার্টিন ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা চরম কষ্ট পোহাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে সড়ক মেরামতে উদ্যোগে নেয়া হবে।’


কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, ‘বন্যা ও জোয়ারের তীব্র স্রোতে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ার খবর শুনেছি। অর্থ বরাদ্দের অভাবে সড়কটি সংস্কার করা যায়নি। শিগগিরই জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান ইউএনও।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন