দেওবন্দে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা, দেয়া হলো সনদও

৫ দিন আগে
ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে খ্যাতনামা ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ পরিদর্শন করেছেন আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে তিনি দেওবন্দ ক্যাম্পাসে পৌঁছান। এ সময় তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।

গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) মুত্তাকির সাতদিনের এই সফর শুরু হয়। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন-সমর্থিত সরকারের পতনের পর শীর্ষ কোনো তালেবান নেতার প্রথশ নয়াদিল্লি সফর এটা। পরদিন শুক্রবার (১০ অক্টোবর) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে তার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

 

এদিন দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে দেওবন্দ পরিদর্শনে যাওয়ার কথা জানান এই তালেবান নেতা। শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে দেওবন্দে পৌঁছান মুত্তাকি। এ সময় মাদ্রাসার রেক্টর মাওলানা মুফতি আবুল কাসিম নোমানি এবং ১৫ জন প্রবীণ আলেমের একটি প্রতিনিধিদল তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান।

 

আফগান মন্ত্রী যখন দেওবন্দ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন, তখন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা পথে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তার ওপর ফুলের পাপড়ি বর্ষণ করেন। এরপর মুত্তাকি মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশে মাওলানা নোমানির নির্দেশনায় দারসুল হাদিস নামে একটি ঐতিহ্যবাহী হাদিস পাঠে অংশ নেন।

 

সেখানে তাকে হাদিস শিক্ষা দেয়ার আনুষ্ঠানিক অনুমতিপত্র দেয়া হয় যা ‘সনদ’ বলে পরিচিত। এটা একটা বিরল সম্মান - যার ফলে এখন থেকে তিনি তার নামের সাথে ‘কাসেমি’ পদবি যুক্ত করার অধিকার অর্জন করেছেন।

 

আরও পড়ুন: দেওবন্দ-তাজমহল পরিদর্শনে যাচ্ছেন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী

 

১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ ভারতে সুন্নি ইসলামি ভাবধারার সবচেয়ে বড় ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র। ভারত ও ভারতের বাইরের হাজার হাজার মুসলিম ছাত্র এখানে পড়াশোনা করেন। 

 

দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে দারুল উলুম দেওবন্দ শনিবার আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিকে স্বাগত জানাতে সমস্ত একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করে। সাবেক ছাত্ররা বলছেন, এমন পদক্ষেপের কোনো নজির নেই। মাদ্রাসাটি আগে কখনও কোনো ‘ভিআইপি’র পরিদর্শনের জন্য ক্লাস বন্ধ করেনি।

 

দেওবন্দে নজিরবিহীন উষ্ণ অভ্যর্থনা ও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন আমির খান মুত্তাকি। তিনি স্থানীয় উলামা ও জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

মুত্তাকি বলেন, ‘কেবল দারুল উলুমের মানুষই নয়, এলাকার সব মানুষ এখানে এসেছেন। তারা আমাকে যে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তার জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য আমি দেওবন্দের উলামা এবং এলাকার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে।’

 

আরও পড়ুন: কোনো নারী সাংবাদিক উপস্থিত না থাকা নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত

 

আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি ও দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মাওলানা আরশাদ মাদানি বলেন, ‘আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে আমি তাকে বলেছি, আপনার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেবল একাডেমিক নয়। আপনারা ভারতের স্বাধীনতায় অবদান রেখেছেন। আমাদের পূর্বপুরুষরা ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে আফগানিস্তানের ভূমি বেছে নিয়েছিলেন স্বাধীনতার জন্য। আপনারা আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো শক্তিকে পরাজিত করেছেন।’

 

আরশাদ মাদানি আরও বলেন, ‘ভারত ও আফগানিস্তানের সম্পর্কের ব্যাপারে আমির খান মুত্তাকি বলেছেন যে. এই সময়ের মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।’ তার কথায়, ‘আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথোপকথনের সময় এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ভারতের মুসলমানদের এবং দারুল উলুমের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।’

 

মাওলানা আরশাদ মাদানি বলেন, ‘আমাদের আলাপচারিতায় কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি। কথোপকথন কেবল ধর্মীয় বিষয়গুলোর সীমাবদ্ধ ছিল। আগে ভারতের অভিযোগ ছিল যে আফগানিস্তান ভারতে সন্ত্রাসী পাঠিয়েছে। এখন এই বৈঠকের পর নিশ্চিত হয়ে গেছে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য আফগানিস্তান থেকে কোনো সাহায্য ভারতে পৌঁছায় না।’ 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন