শনিবার (২৫ অক্টোবর) ভোর থেকে হাজারও জেলে ও মহাজন বাগেরহাটের মোংলার পশুর নদীর চিলা মোহনায় জড়ো হন। তারা জাল, নৌকা এবং শুঁটকি তৈরির সরঞ্জামসহ রাত ১২টার দিকে সাগরপাড়ের দুর্গম চরাঞ্চলের উদ্দেশে রওনা দেন।
এ মৌসুমে সুন্দরবনের দুবলা চরাঞ্চলে অন্তত ৩০ হাজার জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছে বন বিভাগ। একইসঙ্গে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বন বিভাগের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। বন বিভাগের লক্ষ্য, এ মৌসুমে শুঁটকি উৎপাদন থেকে ৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, মৌসুমের শুরুতেই রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মোংলা থেকে নদীপথে দুবলা জেলেপল্লীর দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। সুন্দরবন সংলগ্ন এই পল্লীর সব কার্যক্রম জেলে ও মৎস্যজীবীদের ঘিরে আবর্তিত হয়। বন বিভাগের আওতায় থাকা সাতটি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্রকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে দুবলা জেলেপল্লী।
তিনি আরও জানান, মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য বঙ্গোপসাগরের দুবলা, আলোরকোল, মেহেরআলী, শ্যালার চর, অফিস কেল্লা প্রভৃতি চর ইতোমধ্যে পরিদর্শন ও স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, জেলেরা অভিযোগ করেছেন যে, আগের বছরগুলোতে দুবলার চরে যাওয়ার পথে এবং গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে দস্যুদের হাতে পড়ে তারা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসতেন। গত সাত বছর অপেক্ষাকৃত নিরাপদে মাছ আহরণ করতে পারলেও নতুন করে আবারও দস্যু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভিনদেশি জেলেদের অনুপ্রবেশও তাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। জেলেদের দাবি, দস্যুরা আবারও মুক্তিপণ আদায়, জেলেদের মারধর ও লুটপাট শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: খুলনা-মোংলা রেলপথ: নেই পণ্যবাহী ট্রেন, থেমে আছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা
ইলিশ মৌসুম শেষ হওয়ার পর আশায় বুক বেঁধে দেশীয় জেলেরা সমুদ্রযাত্রা করছেন। তবে জেলেদের অভিযোগ, ইলিশ প্রজনন মৌসুমে যখন দেশীয় জেলেরা ২২ দিন (৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর) মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন, তখন ভারতীয় জেলেরা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে শত শত ফিশিং ট্রলারে ইলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এরপরও জেলেরা শুঁটকি আহরণের আশায় সাগরে যাত্রা করছেন শনিবার রাতে।
জেলেরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে যাতে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার ও শুঁটকি তৈরি করা যায়, সেজন্য প্রশাসনের নজরদারি আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
মৎস্যজীবীদের সংগঠন ‘দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপ’-এর সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলের মৌসুমি জেলেরা জাল, নৌকা ও মাছ আহরণের উপকরণ নিয়ে সমুদ্রযাত্রা শুরু করেছেন। জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন।’
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দফতর) অপারেশন কর্মকর্তা বলেন, ‘সুন্দরবন ও সাগর এলাকায় সবসময় জলদস্যু দমন, মৎস্য ও বনজ সম্পদ রক্ষা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের অভিযান অব্যাহত থাকে। তবে শীতকালীন মাছ আহরণের মৌসুমে জেলেদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে এবং শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় বাড়তি নিরাপত্তা দিতে মোংলা থেকে দুবলার চর পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে টহল জোরদার করা হয়েছে।’
এদিকে, মৎস্য আহরণ মৌসুমকে ঘিরে উপকূলের জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। পরিবারের সদস্যরা স্বজনদের বিদায় জানাতে নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করছেন।
প্রতি বছর শীত মৌসুমে সুন্দরবনের গহিনে সাগরপাড়ের দুবলা, মেহেরআলীর চর, আলোরকোল, অফিস কেল্লা, মাঝের কেল্লা, শ্যালার চর, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আম বাড়িয়া, বড় আম বাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, চাপড়া খালীর চর, কোকিলমনি ও হলদাখালীর চরে হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবী সমবেত হন। এসব চরে অস্থায়ী ঘর তুলে তারা মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির কাজ করেন। আহরিত মাছ শুকিয়ে শুঁটকি আকারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও বিদেশেও বাজারজাত করা হয়।
]]>
৩ সপ্তাহ আগে
৫







Bengali (BD) ·
English (US) ·