যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা দুই ভাই মিজানুর ও রেজাউল করিমকে ফিরে পেতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়ার পর তদন্তকাজ শুরু হলে মামলা তুলে নিতে এই হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।
এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার ধোবড়া বাজারে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০১৬ সালে শাহবাজপুর ইউনিয়ন থেকে যুবদল নেতা মিজানুর রহমানকে তুলে নিয়ে যান শিবগঞ্জ থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শকসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পরে বড় ভাইকে ছাড়ানোর জন্য পুলিশের কাছে তদবির করেন ছোট ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম। একপর্যায়ে রাজশাহীর এসএস প্লাজা ছাত্রাবাস থেকে রেজাউলকেও উঠিয়ে নিয়ে যান সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা। এরপর থেকেই নিখোঁজ দুই ভাই।
আরও পড়ুন: পুলিশের হাতে ধরা পড়ল ‘খুনের পরে গুম’ হওয়া আলাউদ্দিন!
মামলার বাদী এবং গুমের শিকার মিজানুর ও রেজাউলের ভাই সেতাউর রহমান বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে আমার দুই ভাইকে আ.লীগের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশে গুম করে পুলিশ। কিন্তু দীর্ঘ ৮ বছরে রাজনৈতিক কারনে এনিয়ে কোনো মামলা করতে পারিনি। আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিয়ে আসছেন। এমন অবস্থায় আমরা ভীষণ আতঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে আমরা অনেক আশা নিয়ে মামলা ও গুম কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি। তাদের তদন্তকাজ শুরুর পর ন্যায়বিচারের কিছুটা আশ্বাস পেলেও এখন আসামীরা আমাদেরকে নানারকম হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা আশা করি, সুষ্ঠ বিচার পাব। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
নিখোঁজ দুই ভাই মিজানুর ও রেজাউলের বাবা মোহাম্মদ আইন-আল হক বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবেই বিএনপির রাজনীতি করি। তাই বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ইঙ্গিতে আমার দুই ছেলেকে গুম রাখা হয়েছে। এরপর দফায় দফায় অভিযোগ ও যোগাযোগ করেও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি তাদের। আ.লীগ সরকারের পতন হলে দুই ভাই গুমের বিষয়ে মামলা ও গুম কমিশনে অভিযোগ দিলে তারা তদন্ত শুরু করেছে। গত কয়েকদিন আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা ও গুম কমিশনের সদস্যরা আমাদের বাড়িতে এসেও তদন্তকাজ করেছে।’
আরও পড়ুন: গুমের তদন্ত দলের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল: তাজুল ইসলাম
বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, জেলা ছাত্রদলের সদস্য রোমান পারভেজ, শিবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মইন আহমেদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের শিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল বিশ্বাস, গুম হওয়া দুই ভাইয়ের বাবা মোহাম্মদ আইন-আল হক, ভাই সেতাউর রহমানসহ অন্যান্যরা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে দুই ভাই গুমের ঘটনায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে মিজানুর রহমান ও রেজাউল করিমের বাড়িতে গিয়ে তদন্তকাজ শুরু করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ৮ সদস্যের তদন্ত দলে ছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তা, প্রসিকিউটর ও গুম কমিশনের সদস্য।