জামালপুর জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে মেলান্দহ উপজেলার মহিরামকূল এলাকায় ২০২২ সালে নির্মাণ করা হয় শেখ হাসিনা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, যা বর্তমানে জামালপুর পল্লী উন্নয়ন একাডেমি নামে পরিচিত। এখানে ১০ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, ৬ তলা বিশিষ্ট তিনটি হোস্টেল, ৪ তলা ডরমিটরি ভবন, স্কুল ও মসজিদসহ সব নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালে সম্পন্ন হয়। কিন্তু এরপর থেকে একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
অযত্ন ও অবহেলায় কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পুরো একাডেমিতে জনবল না থাকলেও মহাপরিচালক ও ৮ জন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ পেয়েছেন। কলেজ ছাত্রী রাবেয়া খাতুন জানান, বর্তমানে একাডেমির অফিসে কার্যক্রম চলছে চরম অব্যবস্থাপনায়। সরকারি বাজেটে ৫০ একর জমির ওপর নির্মিত এই প্রকল্পে শতকোটি টাকারও বেশি ব্যয় হলেও কোনো দৃশ্যমান কাজ দেখা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: ১২ হাজার তরুণ-তরুণীকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পিকেএসএফ
তিনি আরও বলেন, এখানে শুধু একজন মহাপরিচালক নিয়োজিত আছেন, অন্য কোনো কর্মকর্তা নেই। শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় তরুণ প্রজন্মও একাডেমির সম্পর্কে জানে না। স্থানীয়রাও এ বিষয়ে জানি না। তাই আমরা দাবি করছি, এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দ্রুত চালু করা হোক।
নতুন প্রজন্ম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, জামালপুর জেলার সার্বিক উন্নয়নকে আরও গতিশীল করতে এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি স্থাপন করা হয়েছিল। তবে সরকার একমাত্র একজন মহাপরিচালক নিয়োগ দিয়ে দায় সেরেছেন। এর ফলে অনেক ট্রেনিং সেন্টার চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে এবং জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। তাদের দাবি, সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করে ট্রেনিং কার্যক্রম চালু করুক।
সামাজিক আন্দোলন জামালপুরের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জামালপুরের উন্নয়ন আরও এগিয়ে নিতে এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরির উদ্দেশ্যে ২০২২ সালে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু মাত্র একজন মহাপরিচালক নিয়োগ দিয়ে সরকার দায়িত্ব শেষ করেছেন। ৫৫ একর জমির ওপর নির্মিত অসংখ্য ট্রেনিং সেন্টার এখন চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে এবং জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। অযত্ন ও অবহেলায় কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। তাই সরকারের প্রতি আমাদের দাবি, দ্রুত জনবল নিয়োগ করে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ট্রেনিং কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
আরও পড়ুন: বেকারত্ব দূর করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ: আসিফ মাহমুদ
পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, জামালপুরে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তবে জনবল সংকটের কারণে একাডেমীটি এখনও পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এবং প্রায় ৬০ জনের মতো জনবল নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।
জনবল নিয়োগ শেষ হলে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একাডেমির কার্যক্রমের সুফল জনগণ ভোগ করবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পল্লী উন্নয়ন মূলত দারিদ্র্য বিমোচন এবং গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে কাজ করবে। এই অঞ্চলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে সরকারের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে এবং সেগুলো প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করা হবে। এর ফলে এই এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।
]]>