ইসলামে শারীরিক ও মানসিক পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দাঁতের যত্ন তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহ অনুযায়ী মিসওয়াক ব্যবহার করা দাঁতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার একটি প্রাচীন অথচ কার্যকর উপায়। আধুনিক বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে যে, মিসওয়াক ব্যবহারের মাধ্যমে দাঁত ও মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায়। দাঁতের সুরক্ষায় সুন্নাহর এ শিক্ষা এবং এর বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করবো আজ।
দাঁতের সুরক্ষায় সুন্নাহসম্মত মিসওয়াক কেনো ব্যবহার করবেন
প্রত্যেক নামাজের পূর্বে রসুলুল্লাহ (সা.) মিসওয়াক ব্যবহার করতেন। আধুনিক বিজ্ঞান আমাদেরও এই অভ্যাস অনুসরণের পরামর্শ দেয়। মিসওয়াকের বিশেষ সুবিধা হলো এটি ব্যবহারের জন্য আলাদা টুথপেস্ট, পানি বা নির্দিষ্ট স্থান প্রয়োজন হয় না।
আরও দেখুন: মুয়াজ মাহমুদ যেভাবে বিশ্বজয় করেছিলেন
অপরিচ্ছন্ন দাঁত থেকে শুধু মুখের দুর্গন্ধই নয়, বিভিন্ন রোগও সৃষ্টি হতে পারে। দাঁতের স্বাস্থ্য মানে শুধু মুখে রোগ বা ক্ষয় না থাকা নয়, বলেছেন ডেভিড কেনেডি, ডিডিএস, যিনি হাউ টু সেভ ইউর টিথ গ্রন্থের লেখক। তিনি আরও বলেন, ‘এটি সামগ্রিক সুস্থতার একটি অংশ। যাঁদের শরীর ভালো, তাদের সাধারণত দাঁত ও মাড়িও ভালো থাকে।’
দাঁত আমাদের জন্য আল্লাহর একটি বিশেষ নেয়ামত। একটি প্রচলিত উক্তি হলো, চোখ যদি আত্মার জানালা হয়, তবে মুখ হলো শরীরের দরজা। দাঁত আমাদের হজম প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে, কথা বলায় সহায়তা করে। মুখমণ্ডলের কাঠামো বজায় রাখে। দাঁত ছাড়া কেউ স্পষ্ট কথা বলতে পারে না, এবং খাবার চিবানোর সুযোগ না থাকলে তা সরাসরি গিলতে হয়, যা হজমশক্তির জন্য ক্ষতিকর।
দাঁতের যত্ন
ডেভিড কেনেডি ১৯৩৮ সাল থেকেই চিনিযুক্ত খাবারের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা নথিভুক্ত করেছেন। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে দাঁতের ক্ষয় কমে গেলেও, উন্নয়নশীল দেশে তা বাড়ছে। ড. ওয়েস্টন প্রাইস, একজন দন্তবিশেষজ্ঞ, দেখিয়েছেন যে সভ্যতাবিহীন সমাজের মানুষের দাঁতের অবস্থা সাধারণত উন্নততর, যা মূলত তাদের খাদ্যাভ্যাসের কারণে। তবে দাঁতের সঠিক যত্ন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষকরা দেখেছেন, দাঁতের সুস্থতায় সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো নিয়মিত ও খাবার পরপর দাঁত পরিষ্কার করা। প্রাচীনকালে অনেক সভ্যতাই প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করত। যেমন, আমেরিকান ইন্ডিয়ানরা প্রিকলি অ্যাশ ট্রি এর বাকল, এবং ভারতীয়রা নিমগাছের ডাল ব্যবহার করত।
মুসলমানদের মিসওয়াক
মিসওয়াক হলো একটি ছোট কাঠি, যার মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করা হয়। কাঠির এক প্রান্ত চিবিয়ে বা কেটে ছোট ব্রাশের মতো তৈরি করা হয়, যা দাঁতের জন্য প্রাকৃতিক উপাদান সরবরাহ করে। মিসওয়াকের সুবিধা হলো এটি পরিবেশবান্ধব, বহনযোগ্য এবং টুথপেস্ট বা পানির প্রয়োজন হয় না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এটি রসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি যদি উম্মতের জন্য কষ্টকর না মনে করতাম, তবে প্রত্যেক নামাজের আগে মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম’ (ইমাম মুসলিম, খণ্ড ১)।
আরও পড়ুন: কোরআনে বর্ণিত প্রসিদ্ধ ১০ ফলমূল
গবেষণা বলছে, দাঁত নিয়মিত পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস দাঁত সুস্থ রাখার প্রধান শর্ত। রসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহ অনুসরণ করলে আমরা শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উভয় দিক থেকেই উপকৃত হতে পারি।
মিসওয়াক শুধু দাঁতের যত্নের একটি প্রাচীন পদ্ধতিই নয়, বরং এটি রসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহ, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করা উচিত। আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে মিসওয়াক ব্যবহার দাঁতের জন্য উপকারী। তাই, দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় সুন্নাহর এই শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকে লাভবান হতে পারি।
]]>