দস্যু আতঙ্ক নিয়ে দুবলার চরে শুঁটকি পল্লীতে যাচ্ছে জেলেরা

৩ সপ্তাহ আগে
প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকি মৌসুম। জীবন জীবিকার তাগিদে হাজারো জেলে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছেন, তবে তাদের মনে তীব্র দস্যু আতঙ্ক আর ঋণের বোঝা। সাগরের পথে যাত্রা শুরু করার আগেই তাঁদের সামনে রয়েছে পাঁচ মাসের অনিশ্চিত জীবন, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তই ঝুঁকিপূর্ণ।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাত থেকে শুরু হবে তাদের যাত্রা। শুঁটকি শিকারের কাজের জন্য সুদূর কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে শত শত জেলে দুবলার চর অভিমুখে রওনা হবেন। এ সময় তাঁরা ঋণ শোধের আশা নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি দেবেন, কিন্তু সঙ্গে থাকবে দস্যুদের তাণ্ডব ও প্রকৃতির নানান ক্ষতি থেকে বাঁচার চ্যালেঞ্জ।


দুবলার চর, যা সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত, বাংলাদেশি জেলেদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শুঁটকি উৎপাদনের এলাকা। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বিভিন্ন ধর্মীয় স্থলসমূহের জন্য পরিচিত হলেও, বাগান গাছ কাটার কারণে পরিবেশের ক্ষতি এবং দস্যুদের তাণ্ডব চিরকালীন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবছরও সেসব পুরনো সমস্যার পুনরাবৃত্তি হওয়া আশঙ্কা করছেন জেলেরা।


দুবলার চর থেকে ফিরে আসা জেলেরা জানান, মহাজনদের কাছে ঋণ শোধের তাড়া থাকলেও, তারা অনেক সময় পুঁজির অভাবে শুঁটকি মৌসুমে যেতে পারেন না। বহু জেলে চড়া সুদে টাকা নিয়ে সাগরের পথে পাড়ি দেয়। আবার অনেকেই নিজের স্বর্ণ বন্ধক রেখে ধার দেন। জেলেরা অভিযোগ করছেন, মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিতে হয়। আর এই কারণে তাদের আর্থিক সঙ্কটের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।


ডুমুরিয়া এলাকার বহদ্দার রবিন বিশ্বাস বলেন, 'এ বছরও পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সাগরে যাচ্ছি। আমাদের সরকারি সাহায্য খুবই কম। তবে, দস্যু-বনদস্যুদের উৎপাত বর্তমানে আবারও বেড়েছে।'


আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার: ৩৫ ট্রলারসহ ১৫০ জেলে আটক


দ্বীপক মল্লিক নামে এক জেলে বলেন, 'গত বছর বনদস্যুদের উৎপাত কম ছিল। কিন্তু এ বছর আবারও তাদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক।' তিনি আরও জানান, যাত্রার পথে প্রকৃতির দানবীয় আছড়ে পড়া ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।


জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির মোংলা শাখার সভাপতি বিদ্যুৎ মণ্ডল বলেন, 'বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর জেলেরা দুবলার চর উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। নিরাপত্তার জন্য তারা বনবিভাগের পাস-পরমিট নিয়ে যাত্রা শুরু করবেন।'


পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, 'এই মৌসুমে আমরা বনদস্যু দমন ও নিরাপত্তার জন্য কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি।'


তিনি আরও বলেন, দুবলার চর থেকে গত মৌসুমে রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। এবছরও প্রায় ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা করা হচ্ছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন