তুরিনের মেয়ে তেজস্বী তুরিন সুমেধা অভিযোগ করেছেন, মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১২টার দিকে ১০ জন লোক নিয়ে শিশির উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ছয় তলা বাড়িটিতে যান এবং বাড়িটি নিজের দাবি করে সবাইকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
আদালতের দেয়া স্থিতাবস্থার পরও বাড়ির ‘নেইমপ্লেট’ সরিয়ে ফেলা এবং নিরাপত্তা কর্মীকে মারধরের অভিযোগও করেন তিনি।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হস্তক্ষেপ করলে চলে যান শিশির। পরে তুরিনের ১৭ বছর বয়সী মেয়ে তেজস্বীকে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘অভয়’ দেওয়া হয় এবং নতুন কোনো সমস্যা হলে পুলিশকে অবগত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ওই বাড়ির একটি তলায় তুরিন আফরোজের পরিবারের সদস্যরা থাকেন এবং বাকি ফ্লোরগুলো ভাড়া দেওয়া। এখান থেকেই সোমবার (৭ এপ্রিল) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আব্দুল জব্বার নামের এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় তুরিন আফরোজকে গ্রেফকতার করা হয়। মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে চার দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কের ওই বাড়ি বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। এটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সৎ ভাই শিশিরের সঙ্গে মামলা চলছে তুরিন আফরোজের। আদালতের রায়ের পর আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে সবশেষ গত ১২ মার্চ পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করেছে আদালত।
তুরিনের মেয়ে তেজস্বী বলেন, “আমার বাসায় প্রায় ১০ জনের মত এসে অ্যাটাক করেছে। আমার রিকশা থামিয়ে জোর করে আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন।”
এসময় ভাড়াটিয়াদেরও তার মামা হুমকি দিয়েছেন বলেন অভিযোগ করেন তেজস্বী। এরপর পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘটনাস্থলে যাওয়া ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা জোনের সহকারী কমিশনার সাদ্দাম হোসাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “তুরিন আফরোজ যে বাসায় থাকতেন সেই বাসা নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ নিয়ে একটি মামলা চলমান রয়েছে। আজ শিশির নামে ওই ভদ্রলোক ওই বাসায় গিয়েছিলেন। বাসার মালিকানা দাবি করলেও তিনি সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারেনি, যেহেতু মামলা চলমান রয়েছে। আমরা উনাকে বলেছি, সমস্যা থাকলে সেটা কোর্ট ডিসাইড করবে। বাড়ির মালিক হয়ে থাকলে প্রপার ডকুমেন্টস দেখান। গতকাল উনি (তুরিন) গ্রেফতার হয়েছেন। এখন একটা মেয়ে আছে, জোর করে বাসা দখল করতে কেন এসেছেন জিজ্ঞাসা করেছি।”
এরপর দলবদলসহ শিশিরের চলে গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “উনার মেয়েকে আমার নম্বরসহ আমাদের টহল টিমের নম্বর দিয়ে এসেছি। কোনও সমস্যা হলে আমাদের জানাতে বলেছি।”
আরও পড়ুন: জুলাই আন্দোলন / হত্যাচেষ্টা মামলায় আদালতে নিজের শুনানি করলেন তুরিন আফরোজ
তুরিনের মেয়ে তেজস্বী জানান, তার মা ও মামা দুই ভাই বোন। এদের মধ্যে তার মা বড়। তার নানা মারা গেছেন। তুরিন আফরোজ তার মায়ের একমাত্র সন্তান এবং তার সৎ মায়েরও একমাত্র সন্তান শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ।
এই বাড়ি নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়ে তেজস্বী বলেন, “আমার নানার দুটো বাসা- একটা হাতিরপুলে, অন্যটি উত্তরার এটি। হাতিরপুলের বাসা শিশির মামাকে দিয়েছেন এবং উত্তরার বাসাটা আমার মাকে দিয়েছে। এরপর ওনারা (শিশির) জাল কাগজ কোর্টে প্রেজেন্ট করে ক্লেইম করতে চাচ্ছে এই বাসাটা ওনার।”
আদালতে বিচারাধীন মামলার খবর অনুযায়ী, তুরিন আফরোজ ২০১৭ সালের ১১ মে ঢাকার দেওয়ানি আদালতে মামলাটি করেছিলেন। মামলায় সৎ মা শামসুন্নাহার ও সৎ ভাই শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজকে বিবাদী করা হয়।
আরজিতে তিনি দাবি করেন, উত্তরার বাড়ির মালিক তিনি এবং তার দখলে রয়েছে। তার ভাই শিশির ও মা শামসুন্নাহার মালিক না হয়েও দখল নিতে বেআইনি চেষ্টা চালাচ্ছেন। এক বছর পর ২০১৮ সাল বাদীপক্ষের আবেদনে বাড়িটি নিয়ে স্থিতাবস্থা দেন আদালত। অপরদিকে আদালতে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে শিশির দাবি করেন, তার বাবা তসলিম উদ্দিন কখনও তুরিনকে এ বাড়ি দান করেননি। তার মা শামসুন্নাহার তাকে (শিশির) এ সম্পত্তি দান করেছেন। পরে ঋণ নিয়ে তিনি বাড়ি করেন এবং ভোগ দখলে ছিলেন।
আজকে বাড়ি দখলচেষ্টার অভিযোগের বিষয়ে শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজের বক্তব্য জানতে পারেনি সময় সংবাদ।