তালিকায় জুলাইয়ের ‘ভুয়া আহত’, চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে হট্টগোল

৩ দিন আগে
স্বৈরাচারী বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যশোরের আহতদের মাঝে চেক বিতরণ নিয়ে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৪ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চেক বিতরণকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ভুয়া আহতদের বিষয়ে প্রশ্ন তুললে এ হট্টগোল শুরু হয়। তবে এর মাঝেই চেক বিতরণ সম্পন্ন করেন জেলা প্রশাসক।

পরে তিনি জানান, আহতদের তালিকায় ত্রুটি থাকলে ছাত্ররা যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দিলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।


যশোরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের তালিকা প্রণয়নে অসঙ্গতি তুলে আপত্তি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। জাবির ট্রাজেডিতে নিহত সবাই শহীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা সেটি নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলেন। একইসঙ্গে আহতের তালিকা প্রণয়নের স্বজনপ্রীতি ও দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তোলা হয়েছে। 


দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত সি ক্যাটাগারির জুলাই যোদ্ধাদের আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ করেন তারা। এসময় পাল্টাপাল্টি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ছাত্ররা। একই সাথে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকার বিষয়ে ব্যাখা দেয়া হয়। চেক বিতরণের সময় ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়ে  স্লোগান দেন দালালি না রাজপথ, রাজপথ...।

আরও পড়ুন: গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ যশোরের এনামের পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান

হট্টগোলের মধ্যেই জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম সি ক্যাটাগরি আহত ৬৬ জনকে প্রত্যেককে এক লাখ টাকার অনুদানের চেক দেন।


যশোর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সদস্য সচিব মারুফ হাসান সুকর্ণ বলেন, ‘জুলাইযোদ্ধার তালিকায় নূর ইসলাম নামে একজনকে আহত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু সে কোথাও আহত হয়নি। এমন অন্তত ২০জনকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যারা কোনোভাবেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল না। এদের জুলাইযোদ্ধা হিসেবে অন্তভুক্তি জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে বেঈমানি করা হয়েছে।’


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মামুন লিখন বলেন, ‘যশোর জেলায় ৬৬ জন আহতকে জুলাইযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ তালিকার অনেকেই দেখছি, যারা কোনোভাবে আন্দোলনে আহত নয়। তাদেরকে জুলাইযোদ্ধা হিসেবে মানতে পারছি না। তালিকা প্রণয়নে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। যারা জুলাইযোদ্ধা তাদের সঙ্গে কোন ভুয়া যোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত হোক, এটা চাই না। অবিলম্বে যাচাই বাছাই করে প্রকৃত জুলাইযোদ্ধাদের চিহ্নিত করার দাবি জানাচ্ছি।’


এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘আমরা যারা আন্দোলন করেছি তাদের প্রায় সবাই কোন না কোনভাবে আহত হয়েছি। কিন্তু সি ক্যাটাগরির তালিকায় যাদের নাম দেখছি, তাদের অধিকাংশই আহত নন। আমরা তো আহতের তালিকায় নাম তুলি নাই। তালিকা যাচাই বাছাই করা উচিত।’


জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহত যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য ও ছাত্রপ্রতিনিধি মেজবাহুর রহমান রামীম বলেন, ‘শুধু যশোরে আন্দোলনে নিহত ও আহতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যশোরের বাইরে রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের তালিকা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। তৎকালীন সিভিল সার্জন আমাদের সামনে ১২২ জনের নামের তালিকা আনেন। সে তথ্য যাচাই বাছাই করে মাত্র ২২জনের নাম সঠিক পাই। সিভিল সার্জন এ সংক্রান্ত মিটিং এ ১২২ জনের নামই চূড়ান্ত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। সর্বশেষ তিনি কমিটির সদস্যদের মতামত ছাড়াই অনেকের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। এর দায় আমরা ছাত্ররা নিতে পারি না।’

আরও পড়ুন: জুলাই যোদ্ধার তালিকায় আ.লীগ নেত্রীর মেয়ের নাম, প্রতিবাদ করায় কুপিয়ে জখম!

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার শহীদ ও আহতদের তালিকা হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। ওই তালিকা জেলা যাচাই বাছাই কমিটি যাচাই করেছে। আমরা তালিকা প্রস্তুতি করিনি। যাচাই বাছাই কমিটিতে দুজন ছাত্র প্রতিনিধি ছিল। তারা সরেজমিনে যাচাই বাছাই করেছে। তারপরেও তালিকায় অসঙ্গতি থাকতে পারে। আহতদের তালিকায় ত্রুটি থাকলে ছাত্ররা যাচাই-বাছাই করে নতুন প্রতিবেদন দিলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’


জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজিবুল আলম, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হোসাইন সাফায়েত, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন