জানা যায়, নীলফামারী সদর জেনারেল হাসপাতাল ২০১৭ সালে ১০০ শয্যায় ও পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। হাসপাতালের সার্বিক চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে ২০১১ সালে নতুন ৬ তলা ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালে শেষ হয়। প্রথমে এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০ কোটি ৯ লাখ টাকা, পরে বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
তৈরি শেষ হওয়ার দীর্ঘ সময় হলেও ভবনটির অধিকাংশ অংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনটি চালুর আগেই দরজা জানালা ভেঙে পড়েছে। কোথাও কোথাও উঠে গেছে টাইলস। অবহেলায় অযত্নে পড়ে আছে অপারেশন থিয়েটারে সরঞ্জাম, মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ওষুধ।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন দিনে হাসপাতালে ভর্তি ৪৭০
অপরদিকে জোড়াতালি দিয়ে পুরাতন ভবনেই নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে চিকিৎসা সেবা। নতুন ভবনে খালি বেড পড়ে থাকলেও জায়গার অভাবে পুরাতন ভবনে রোগীদের এক বেডে ২ এর অধিক বা মেঝেতে গাদাগাদি করে নোংরা পরিবেশে রাখা হচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতালে এক বেডে তিন থেকে চার জন রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিতে দেখা গেছে।
ভর্তি রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের ভেতর নোংরা-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এক বেডে একাধিক রোগীকে রাখা হয়। এক রুমে ১০ থেকে ১২ জন রোগীকে মেঝেতেই গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। করিডোরেও শয্যা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। নতুন ভবনে শয্যার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কেন দিচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ তার সুষ্ঠু জবাব চান তারা ।
চিকিৎসা নিতে আসা আছিয়া বেগম নামে এক রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এত বড় হাসপাতাল হলেও আমাদের মেঝেতেই থাকতে হচ্ছে। নতুন ভবনে খালি বেড থাকলেও সেখানে রোগীদের ভর্তি নিচ্ছে না।’
চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুর রহিম নামে একজন রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ডাক্তারের দেখা পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বেড নেই বলে আমাকে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। অথচ নতুন ভবনে খালি বেডে পড়ে আছে রুমগুলোতে ঝুলছে তালা।’
হালিমা বেগম বলেন, ‘১ সপ্তাহ থেকে বারান্দায় শুয়ে আছি কোনো বেড পাইনি, মানুষজন চলাচল করে ধুলাবালির জন্য বিছানায় থাকা যায় না। ড্রেনের পানির পচা গন্ধে থাকা যায় না।’
আরও পড়ুন: ডোমারে ৩০ বছরেও হয়নি স্থায়ী বাস টার্মিনাল
সিনিয়র স্টাফ নাস শতাব্দী রানী রায় বলেন, ‘রোগীর চাপ সামাল দেয়ার মতো পর্যাপ্ত শয্যা নেই । চিকিৎসক ও সাপোর্ট স্টাফ নেই। অল্প জনবল নিয়ে এত রোগী সামলানো সম্ভব না। যাদের আইসোলেশন বা বিশেষ সেবা দরকার, তাদেরও সামান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
স্থানীয়রা জানান, জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষের একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয় বহন করতে পারেন না। তাই সরকারি হাসপাতালই তাদের শেষ ভরসাস্থল। কিন্তু এখানে এসে নোংরা, ভিড় আর শয্যা সংকটে বিপাকে পড়েন তারা। হাসপাতালের নতুন ভবন চালু না হওয়া যেন সাধারণ মানুষের জন্য ‘আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ’। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক ভবন অব্যবহৃত পড়ে থাকছে, অথচ রোগীরা পুরোনো ভবনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কষ্ট পাচ্ছেন।
স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞদের মতে, অবকাঠামো উন্নয়নেই স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের সমাধান নয়। প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার কারণে নীলফামারীর মতো জেলা হাসপাতালগুলো সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা হারাচ্ছে।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু-আল-হাজ্জাজ বলেন, নতুন আর একটি লিফট লাগানোর কাজ শেষ হলে আগামী মাসে নতুন ভবনে কাজ শুরু করা যাবে। এতে পুরোনো ভবনের রোগীর চাপ অনেকটা কমে আসবে।