তথ্যযুদ্ধের যুগে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা ঢাল’ গড়ছে রংপুরের সাংবাদিকরা

৩ সপ্তাহ আগে
তথ্যযুদ্ধের এই যুগে সাংবাদিকতার ময়দানেও নিরাপত্তা এখন শুধু পেশাগত ঝুঁকি এড়ানোর বিষয় নয়, বরং ডিজিটাল পরিসরে টিকে থাকার এক সংগ্রাম। ভুয়া খবর, হ্যাকিং, নজরদারি ও ডেটা ফাঁসের ভেতর দিয়ে যখন সত্য প্রকাশই হয়ে উঠেছে এক বড় চ্যালেঞ্জ, তখন নিজেদের সুরক্ষায় ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা ঢাল’ গড়ে তুলছেন রংপুরের সাংবাদিকরা।

এই লক্ষেই শনিবার (২৫ অক্টোবর) রংপুরে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সুরক্ষা’ বিষয়ক কর্মশালা। এতে প্রযুক্তিগত সুরক্ষা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত প্রাইভেসি সচেতনতা পর্যন্ত হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।  


‘ডিজিটাল নিরাপত্তা এখন আর কেবল প্রযুক্তিবিদদের বিষয় নয়, সাংবাদিকতা ও অধিকার রক্ষার সঙ্গেও এটি গভীরভাবে যুক্ত’—এই বার্তা সামনে রেখে রংপুরের এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কর্মশালাটি আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ভয়েস’। প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে এমন প্রশিক্ষণের আয়োজন করে আসছে।  


কর্মশালায় স্থানীয় সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত তরুণ সাংবাদিকরা এবং মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা ও অনলাইন সুরক্ষার বিভিন্ন দিক—ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ (থ্রেট মডেলিং), নিরাপদ ব্রাউজিং ও যোগাযোগ, এনক্রিপশন, দুই ধাপ বিশিষ্ট লগইন ব্যবস্থা, ডিজিটাল স্বাস্থ্যবিধি (হাইজিন) ও প্রাইভেসি সচেতনতা বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।


আরও পড়ুন: খুলনায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ শুরু


ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও কার্যকর হয় না। এই দুটি অধিকার একে অপরের পরিপূরক।’


তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইনে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে এবং সচেতন ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি।’  


প্রকল্প কর্মকর্তা প্রিয়তা ত্রিপুরা কর্মশালায় ডিজিটাল সুরক্ষার কৌশলপত্র উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল পরিসরে আমাদের নির্ভরতা বাড়ছে। বিশেষ করে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে কাজ করেন— তাদের তথ্য নিরাপদ রাখতে ডিজিটাল নিরাপত্তার কৌশলগুলো জানা ও মানা অত্যন্ত জরুরি।’  


ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘যারা ডিজিটাল অধিকার সম্পর্কে সচেতন এবং যারা সচেতন নন— এই দুই শ্রেণির মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। বিশ্বাসযোগ্য উৎস যাচাই না করে তথ্য শেয়ার করা ডিজিটাল অধিকার রক্ষার বড় প্রতিবন্ধকতা।’  


গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী মো. নুরুন্নবী শান্ত বলেন, ‘আমাদের আইনগুলোকে আন্তর্জাতিক মান ও নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। গণমাধ্যমকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়গুলোতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কেবল তখনই আইনগুলো মানবাধিকারভিত্তিক হবে।’


আরও পড়ুন: বাংলাদেশে তরুণদের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করবে কোইকা


কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, ভিপিএন, টর ব্রাউজার ব্যবহার, এনক্রিপ্টেড মেসেজিং ও ডেটা ব্যাকআপের মতো বিষয় শেখানো হয়। এছাড়া, ভাইরাসযুক্ত লিংক চেনার উপায়, মোবাইল ও সামাজিক মাধ্যমে গোপনীয়তা রক্ষা, মাঠপর্যায়ে কাজের সময় পাবলিক ওয়াইফাই এড়ানো ও জিও-লোকেশন ট্র্যাকিং বন্ধ রাখার কৌশল নিয়েও হাতে-কলমে অনুশীলন করা হয়।  


ডিজিটাল ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং নিরাপদ অনলাইন উপস্থিতি নিশ্চিত করাই এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য বলে আয়োজকরা জানান।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন