ঢাকায় এসে যুবকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন চীনা নাগরিক

২ সপ্তাহ আগে
টাকার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশের দুই যুবকের সঙ্গে হাত করেন এক চীনা নাগরিক। এরপর তাদের দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন যুবকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন ওই দুই যুবকসহ চীনা নাগরিক।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

 

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন: মোর্শেদ আলম (৩৮), জামাল উদ্দিন (৪৩) ও চীনা নাগরিক মি. কুকি (৩৫)।

 

উত্তরখান থানার বরাত দিয়ে ডিএমপি জানায়, গ্রেফতার তিনজন নাহিদুল ইসলাম নামে এক যুবককে (২৮) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে প্রলোভন দেখিয়ে পলারস্টেপ সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে  চাকরির জন্য প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে পলারস্টেপ সফটওয়্যারে অনলাইনে কাজ শুরু করেন ওই যুবক।

 

কাজের শুরুতে তারা নাহিদুলকে ৮২০ টাকা কমিশন দেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন অফারের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারকরা তার কাছ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ‘আনাস এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি চলতি অ্যাকাউন্টে কয়েক দফায় ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৭ টাকা নেন। কিন্তু নাহিদুলকে কমিশন না দিয়ে আবারও ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৩০ টাকা দাবি করেন তারা। তখন বাদি ডাচ বাংলা ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন যে, অ্যাকাউন্টটি উত্তরখানের বাবুর্চি বাড়ির আনাস এন্টারপ্রাইজের নামে। তখন বাদি বিষয়টি উত্তরখান থানায় জানান।

 

উত্তরখান থানার একটি টিম সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে আনাস এন্টারপ্রাইজের দোকানের মালিক মো. মোর্শেদ আলমকে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসে। পুলিশকে মোর্শেদ জানান, জামাল উদ্দিন নামের একজনের সহযোগিতায় তার নিজ নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২২ ডিসেম্বর প্রায় ৩২ লাখ টাকা যোগ হয়। যার মধ্যে ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা মোর্শেদের নিজের এবং বাকি টাকা জামাল উদ্দিনের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে।

 

মোর্শেদ আলমকে হেফাজতে নিয়ে তার কাছে থাকা ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল ফোন এবং কিছু চেকের পাতা জব্দ করে পুলিশ। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতে বাবুর্চি বাড়ির গফুর মুন্সি রোডের একটি বাসা থেকে জামালকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনিও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পুলিশ তার কাছ থেকে ৪ হাজার ডলার ও অন্য বিদেশি মুদ্রা, দুটি মোবাইল ফোন এবং ব্যাংকের চেকবইয়ের কিছু পাতা জব্দ করে।

 

আরও পড়ুন: ধামরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা কবীর মোল্লা গ্রেফতার

 

পরবর্তীতে জামালের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণখান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাসিমের নেতৃত্বে উত্তরখান থানার একটি টিম মঙ্গলবার ভোরে গুলশান-১ এর এডব্লিউআর টাওয়ারের নিচ থকে চীনা নাগরিক মি. কুকিকে গ্রেফতার করে।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে চীনে গিয়ে মি. কুকির সঙ্গে জামালের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে মি. কুকি জানান, কিছুদিন পরে তিনি বাংলাদেশে আসবেন এবং তাকে একটি লাভজনক ব্যবসা দেবেন। ১৫-২০ দিন আগে উত্তরা রেস্টুরেন্টে মি. কুকির সঙ্গে জামালের সাক্ষাৎ হয়। সেখানে তিনি জামালকে কয়েকটি বিজনেস অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে বলেন, যে নম্বরে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আসবে এবং তিনি কুকির দেয়া নম্বরে ওই টাকা ট্রান্সফার করবেন।

 

কুকি জানান, এর বিনিময়ে জামাল কমিশন পাবেন। প্রস্তাবে জামাল রাজি হয়ে মোর্শেদ আলমের আনাস এন্টারপ্রাইজের বিজনেস অ্যাকাউন্ট নম্বর মি. কুকিকে দেন।

 

ডিএমপি আরও জানায়, গ্রেফতার কুকি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ভুক্তভোগী নাহিদুলের অভিযোগে গ্রেফতার তিনজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন