ঢাকা শহরে যে মসজিদে সর্বপ্রথম আজান দেয়া হয়েছিল

৩ সপ্তাহ আগে
রাজধানী ঢাকা শহরে সর্বপ্রথম কে আজান দিয়েছিল ইতিহাসে তার নাম পাওয়া যায়নি। তবে, কোন মসজিদে আজান দেয়া হয়েছিল তা মোটামুটি সর্বজনবিদিত। পুরান ঢাকার ৬ নম্বর নারিন্দা রোডের হায়াৎ বেপারির পুলের উত্তর দিকে অবস্থিত রাজধানীর প্রথম মসজিদ ‘বিনত বিবির মসজিদ’।

বাংলাপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, বিনত বিবির মসজিদই ঢাকার সবচেয়ে পুরনো মুসলিম স্থাপত্য এবং প্রথম মসজিদ। প্রায় ৬০০ বছর ধরে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এ মসজিদটি। ঢাকায় আনুমানিক ১১ হাজার মসজিদের হিসাব পাওয়া যায়, যে কারণে ঢাকা মসজিদের নগরী হিসেবেও খ্যাত। ১৪৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন বাংলার সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসনামলে আমলে বিনত বিবি মসজিদটি নির্মিত হয়।



ইতিহাস থেকে জানা যায়, সেই সময়ের যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল নদীনির্ভর। পারস্য উপমহাসাগরীয় অঞ্চলের আরাকান আলী নামে এক সওদাগর এই অঞ্চলে বাণিজ্য করতে আসেন। মেয়ে বিনত বিবিকে নিয়ে তিনি এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। একপর্যায়ে নামাজ ও ইবাদতের জন্য তিনি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। এর কিছু দিন পরই মেয়ে বিনত বিবির আকস্মিক মৃত্যু হয়। তাকে মসজিদের পাশেই কবর দেওয়া হয়। ঠিক তার ছয় মাস পরে আরাকান আলিও মারা যান। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকেও ওই জায়গায়, অর্থাৎ মেয়ের কবরের পাশেই সমাহিত করা হয়। সেই থেকে এই মসজিদটি সবার কাছে বিনত বিবির মসজিদ নামেই পরিচিতি পায়।


আরও পড়ুন:  লক্ষাধিক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন যে মসজিদে


কালের বিবর্তনে বদলে গেছে মসজিদ ও এলাকাটির চেহারা। রয়ে গেছে শুধু মসজিদটির স্থাপনা। মসজিদের চার পাশের উঁচু দালানগুলো মসজিদকে আড়াল করে ফেলেছে। মসজিদের পাশে গড়ে উঠেছে ভোজনবিলাসীদের জন্য বেশ কিছু নামিদামি রেস্তোরাঁ। তবে মসজিদের পুরোনো দালানটি এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দেওয়ালের কালো পাথরে, ফারসি ভাষায় লেখা রয়েছে মসজিদটির ইতিহাস। হিজরি ৮৬১ সনে মসজিদটি প্রথম সংস্কার করা হয়। পরবর্তীকালে ৮৬৬ সনে বিনত বিবি ও আরাকান আলীর সমাধিস্থলে বিনত বিবির মাজারটি স্থাপন করা হয়। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে একটি কমিটি গঠন করে মসজিদটি দেখভাল করে আসছে। বিনত বিবির মাজারটিও ঠিক আগের মতোই আছে। 


মসজিদটির আগের স্থাপনা ঠিক রেখে তার সঙ্গে সংযোগ করে নতুন সাততলা ভবনবিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। যার বর্তমান নাম ‘বিনত বিবি নারিন্দা বড় জামে মসজিদ’। মসজিদে নামাজ পড়তে আসা এক জন নামাজি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই শত শত দর্শনার্থী দূর-দূরান্ত থেকে মসজিদটি দেখতে ও নামাজ আদায় করতে আসেন, যাদের মধ্যে বিদেশি পর্যটকও আছেন। মসজিদটিতে শুক্রবার ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করতে পারেন। বর্তমানে মসজিদটি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

আরও পড়ুন: চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের মসজিদটির ঝাড়বাতি সোনায় মোড়ানো!

সাত কাঠা জমিতে নির্মিত চারকোণা মসজিদটির আদি গঠনশৈলীতে একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজ থাকলেও ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বার সংস্কারকালে আরও একটি গম্বুজ এতে যুক্ত করা হয়। জেমস টেলর তার ‘কোম্পানি আমলে ঢাকা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘১৮৩২ সালে ঢাকার তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট জর্জ হেনরি ওয়াল্টার এক রিপোর্টে বর্ণনা করেন, তত্কালীন ঢাকায় মসজিদ ছিল মাত্র ১৫৩টি। এই সংখ্যা পরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন