জানা যায়, চলতি মার্চ মাসের ২৩ দিনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে অন্তত ১৭টি দুর্ঘটনা হয়। নিহত হয়েছেন সাতজন, আহত অন্তত অর্ধশত। ঈদকে ঘিরে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে যাত্রীর চাপ বাড়ায় পরিবহনের সংখ্যাও বেড়েছে; সেইসঙ্গে নসিমন, থ্রি-হুইলার, ভটভটিও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
সাকুরা পরিবহনের চালক সুবহান ইসলাম জালাল বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে কুয়াকাটা যাই পথে মহাসড়কে অটোরিকশা যেখানে সেখানে ব্রেক করে এতে আমাদের গাড়ি চালাতে খুব সমস্যা হয়। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
মশিউর রহমান নামে এক ট্রাকচালক বলেন, ‘মহাসড়কে থ্রি-হুইলারের কারণে আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।’
আরও পড়ুন: ঈদযাত্রায় সড়কে চলাচলে নতুন নির্দেশনা
এ দিকে ফিটনেসবিহীন লক্কর-ঝক্কড় বাস রঙ করে নতুনভাবে নামানো হচ্ছে মহাসড়কে। ঈদযাত্রার নিরাপত্তায় এগুলো নিয়ন্ত্রণের দাবি বরিশাল বাস মালিক গ্রুপ সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেনের।
বরিশাল বিএনপির পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো ফিটনেসবিহীন কিংবা লক্কর-ঝক্কড় বাস চলাচল করতে দেয়া হবে না। ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরগুনার আমতলীর ২৬ কিলোমিটার অংশে গত দুই বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৫ জনের বেশি। পদ্মা সেতু চালুর পর এ সড়কে যান চলাচল বাড়লেও বাড়েনি প্রশস্ততা।’
পুলিশ ও চালকরা বলেন, এই মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ থ্রি-হুইলার।
আরও পড়ুন: রাজধানী থেকে বের হতে ও প্রবেশে একমুখী চলাচল
এ দিকে একই অবস্থা, পিরোজপুরেও। বেকুটিয়া সেতুর কারণে যে গতি বেড়েছে, তাতে মহাসড়কে মরিয়া নসিমন, থ্রি-হুইলার। সরু সড়ক ও প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তা না থাকায় দুর্ঘটনা লেগেই আছে।
এ ছাড়া সর্ব দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালী-কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত মাহিন্দ্র, সিএনজি, অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন ধরনের তিন চাকার যান। আইন ও নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে দূরপাল্লার পরিবহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যান। তিন চাকার ব্যাটারিচালিত যান মহাসড়কে চলার কারণে প্রতিদিন ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। মহাসড়কে তিনচাকার অটো চলাচলের কারণে দুএকটা দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কে তিনচাকার যান চলাচল যেন না করতে পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায় পুলিশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পর্যটন নগরী কুয়াকাটার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার সড়ক পথে বাড়ছে পরিবহনের সংখ্যা। প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন বিলাসবহুল বাস। কিন্তু তিনচাকার ব্যাটারিচালিত যান মহাসড়কে চলার কারণে প্রতিদিন ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
কোনো রকম নিয়ম কানুন না মেনে এই সব যান চলাচল করছে। এতে মহাসড়কে পরিবহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মহাসড়কে ৩ চাকার যান চলাচল নিয়ে বিআরটিএর নির্দেশনা
মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত যান চলাচলে সমস্যার কথা জানিয়ে একধিক পরিবহনের চালক বলেন, ‘মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করায় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে আমাদের। এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে না পারলে ভোগান্তি কমবে না, সময়ও বেশি লাগবে। সড়কে কোনো সিঙ্গেল না দিয়ে যেখানে সেখানে তারা যাত্রী নিয়ে পাকিং করে দাঁড়িয়ে যায়। এতে আমাদের বড় গাড়ি চালাতে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।’
হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তা তারা মানছে না এদের কারণে প্রতিদিন এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানালেন জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার ইমাম হোসেন নাসির।
আরও পড়ুন: অটোরিকশায় বাড়ছে এলপিজির ব্যবহার, প্রাণহানির শঙ্কা
এ বিষয়ে পটুয়াখালী পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ বলেন, ‘মহাসড়কে আটোবাইকসহ তিনচাকার কোনো গাড়ি চলাচলের অনুমতি নেই। কিন্তু সাধারণ জনগণের কথা বিবেচনা করে কিছু আটোবাইক চলাচল করছে। ঈদকে সামনে রেখে সড়কে অনেক যানবাহনের চাপ বেড়েই চলেছে। আমরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং তাদের সর্তক করছি।’
পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা থেকে বরিশাল সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা, আর বরিশাল থেকে কুয়াকাটা আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। ঈদে দুই সহস্রাধিক বাসে ৫০ লাখেরও বেশি যাত্রী চলাচল করবে বলে জানান পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।