খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাত্র দেড় মাস আগে চৌগাছা থানায় যোগদান করা এ ওসির বিরুদ্ধে টর্চার সেল পরিচালনা, ঘুষ ও রিমান্ড বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নিরীহ মানুষকে হয়রানি এবং নারী কেলেঙ্কারির মতো বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে তাকে এক নারীর সঙ্গে অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করতে দেখা যায়। যা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ওসি পায়েল হোসেন গত ১৭ নভেম্বর ঢাকার রমনা থানা থেকে বদলি হয়ে চৌগাছা থানায় যোগদান করেন। একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে তিনি সীমান্তবর্তী উপজেলা যশোরের চৌগাছা থানার ওসির পদে আসীন হন। এ টাকা তুলতে তিনি জড়িয়ে পড়েন নানা অপকর্মে। প্রথম অভিযানে চৌগাছা বাস মালিক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিনের বাড়ি সারা রাত অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় জসিম উদ্দিনকে একাধিক মামলায় আসামি করা হয়।
এছাড়া উপজেলার ভাদড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মানিক হোসেনকে আটক করে থানায় আনার পর হাজতে না রেখে নিজের বাংলোতে আটকে শারীরিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় মানিকের স্ত্রীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা দাবি করে তা আদায় করেন। পরে অস্ত্র মামলায় তাকে রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করেন।
আরও পড়ুন: ৩ বছর ধরে ওসির বাসভবনে থানার কার্যক্রম
এছাড়া মাসিলা গ্রামের পারভেজ আহমেদ সোহাগ নামের এক যুবককে তুলে এনে ৩২ ঘণ্টা আটকে রেখে ইলেকট্রিক শক ও নির্যাতনের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠে। এরপরও তাকে ডাকাতি ও মাদক মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন। ২৩ নভেম্বর উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদ মল্লিককে গ্রেফতার করে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন ওসি পায়েল। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে চাঁদাবাজির মামলায় আদালতে পাঠানো হয়।
এরপর ১৭ ডিসেম্বর চৌগাছা বাজারের ব্যবসায়ী জীবন হোসেন লিপু এবং তার বন্ধু বাবুলের ছোট ভাই হারিয়ে গেলে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। দুইদিন পর ওসি বাবুলকে ডেকে নিয়ে জানান, হারানো ব্যক্তিকে উদ্ধারে অতিরিক্ত এসপির জন্য ২ লাখ টাকা লাগবে। নিরুপায় হয়ে বাবুল ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দেন। পরে ওই হারানো ব্যক্তিকে পরিবারের সদস্যরাই উদ্ধার করলে ওসি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গুলি করার হুমকি দিয়ে তাদের চৌগাছা ছাড়তে বাধ্য করেন।
সবশেষ গত শনিবার রাতে ৫ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওসি পায়েল মোবাইলে কথা বলছেন আবার কখনো হাসতে হাসতে ওই নারীকে বিভিন্নভাবে অশালীন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। একপর্যায়ে নিজের শরীর প্রদর্শন করেন। এছাড়াও ওসি পায়েল এবং ওই নারীর আরও অশালীন তিনটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জ ছাড়তেই হলো নাজমুলকে, নতুন ওসি কালাম
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, তিনি তালাকপ্রাপ্ত, এই সুযোগে ওসি তাকে বিভিন্ন সময়ে ফোন কল করে থানায় ডাকতো। বিভিন্নভাবে তার লালসা চরিতার্থ করতে জোরজবরদস্তি করতো।
ভাইরাল হওয়া অডিও-ভিডিও প্রসঙ্গে ওসি পায়েল হোসেন দাবি করেন, তাকে ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
এসব ব্যাপারে যশোর পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘ওসি পায়েলের কর্মকাণ্ডে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রুহুল আমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’