ডালিম ভাই সঠিকভাবে সিপিআর না দিলে হয়তো আমাকে বাঁচানো যেত না: তামিম

৩ সপ্তাহ আগে
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন তামিম ইকবাল। সামাজিক মাধ্যমে দীর্ঘ এক পোস্টে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, শুরু থেকে পাশে থাকা সকলের প্রতি। পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, সংকটাপন্ন সময়ে তাকে সঠিকভাবে সিপিআর দিয়ে হৃদযন্ত্র সচল রাখার নায়ককে।

গত ২৪ মার্চ সাভারে ডিপিএলের ম্যাচ খেলতে গিয়ে বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তামিম। অস্বস্তি বৃদ্ধি পেলে নিজের গাড়িতেই পার্শ্ববর্তী কেপিজে হাসপাতালে যান এই তারকা। এরপর পুনরায় মাঠে ফিরে আসেন। তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে নিতে বিকেএসপিতে হেলিকপ্টারও উড়িয়ে আনা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হলে তাকে আর হেলিকপ্টারেও ওঠানো সম্ভব হয়নি। ফলে ফের কেপিজে হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকরা ২২ মিনিট সিপিআর এবং ৩টি ডিসি শক দিয়ে তামিমকে চিকিৎসা দেয়ার মতো অবস্থায় নিয়ে আসেন। এরপর তার এনজিওগ্রাম করা হয় এবং ব্লক হয়ে যাওয়া ধমনিতে রিং (স্টেন্ট) বসানো হয়।

 

সেখানে দুইদিনের চিকিৎসা শেষে বুধবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর এভারকেয়ারে হাসপাতালে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন তামিম। সেখান থেকে গতকাল বাসায় ফেরেন তামিম। বাংলাদেশ দলের সাবেক এ অধিনায়ক যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তখন পুরো দেশ তার জন্য প্রার্থনায় মগ্ন। প্রার্থনা করেছিল দেশের বাইরের অনেক ক্রীড়াবিদও।

 

সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তামিম সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘আপনাদের সবার দোয়ায় ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহমতে এখন আমি বাসায়। উথালপাথাল এই চারটি দিনে নতুন জীবন যেমন পেয়েছি, তেমনি আমার চারপাশকে আবিষ্কার করেছি নতুন করে। সেই উপলব্ধির সবটুকুতে মিশে আছে কেবল ভালোলাগা ও কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সবার ভালোবাসার ছোঁয়া ক্যারিয়ারজুড়ে নানা সময়ই পেয়েছি। তবে এবার তা অনভুব করতে পেরেছি আরও তীব্রভাবে। আমি সত্যিই আপ্লুত।’

 

আরও পড়ুন: নতুন পেস বোলিং কোচের খোঁজে বাংলাদেশ, তালিকায় শন টেইট-উমর গুল

 

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে তামিমের ফিরে আসতে যখন সবাই প্রার্থনায় মগ্ন ছিল, তখন তাকে সুস্থ করে তুলতে কাছ থেকে কাজ করেছেন কয়েকজন নায়ক। বিশেষ করে তিনি যখন দ্বিতীয়বার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন যদি সময়মতো ঠিকঠাক সিপিআর না পেতেন, তাহলে হয়তো হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই হৃদযন্ত্রের চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। তাকে বাঁচিয়ে রাখতে বীরত্বের যে কাজটি করেছেন ট্রেইনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম। তামিম প্রশংসা করেছেন কেপিজে হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সকল স্টাফদের।

 

সামাজিক মাধ্যমে এ ক্রিকেটার লেখেন, ‘বিকেএসপিতে আমার অসুস্থতার শুরু থেকেই অনেককে পাশে পেয়েছি তাৎক্ষণিকভাবে। ম্যাচ রেফারি দেবু দা (দেবব্রত পাল), বিকেএসপির চিকিৎসকরা এবং আরও যারা তখন ছিলেন সেখানে, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার যে ভাই আমাকে দ্রুতগতিতে নিয়ে গেছেন হাসপাতালে, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমাদের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব কীভাবে, আমার আসলে জানা নেই। আমি পরে জেনেছি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন যে, ডালিম ভাই ওই সময় সঠিকভাবে সিপিআর না দিলে হয়তো আমাকে বাঁচানো যেত না। উপযুক্ত মানুষকে উপযুক্ত সময়ে আমার পাশে রেখে আল্লাহ আমাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়েছেন।’

 

‘মোহামেডানের সাপোর্ট স্টাফ ওয়াসিমের কথা না বললেও নয়। শুরু থেকে এখনও সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়েই আছে আমার। কেপিজে হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনিরুজ্জামান মারুফ ও তার দক্ষ চিকিৎসক দল তাদের পেশাদারিত্ব আর আন্তরিকতার মিশেলে যেভাবে দ্রুততায় চিকিৎসা করেছেন, আমাদের দেশের চিকিৎসকদের মান ও কার্যকারিতাই ফুটে উঠেছে তাতে। আমি পরে শুনেছি যে, দেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডা. মারুফ ও তার দল মিরাকল ঘটিয়েছেন। গোটা চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় কেপিজে হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকা থেকে শুরু করে যারা যে কোনোভাবে যতটুকু সম্পৃক্ত ছিলেন, সবাইকে হৃদয়ে লালন করব আজীবন। এই হাসপাতালে যতটুকু সময় ছিলাম, তাদের হৃদ্যতার পরশ অনুভব করে যাব সবসময়। ঢাকা শহরের বাইরে ওই এলাকায় এতটা উঁচু মানের হাসপাতাল আছে, এতটা কুশলী চিকিৎসক দল ও স্টাফরা আছেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার এগিয়ে চলার একটি প্রমাণ এটি। দেশজুড়ে নানা জায়গায় এর কাছাকাছি মানের হাসপাতাল যদি আরও কিছু থাকে, আমার মতো আরও অনেক মানুষের প্রাণ রক্ষা পেতে পারে।’

 

আরও পড়ুন: তামিমের ধূমপানের কথা প্রকাশ করে ক্ষমা চাইলেন সেই চিকিৎসক

 

আপাতত সেরে উঠেছেন তামিম। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। আবার ক্রিকেট খেলতে পারবেন কি না, সেটা জানতে তাকে অপেক্ষা করতে হবে আরও ৩-৪ মাস। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার শারীরিক অবস্থা দেখে পরামর্শ দেবেন চিকিৎসকরা।

 

সবার প্রার্থনা চেয়ে পোস্টের শেষে তামিম যোগ করেন, ‘ধন্যবাদের তালিকা আসলে শেষ হওয়ার নয়। আরও অনেকেই নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, অনেকের কথা জানি, অনেকের কথা হয়তো জানি না। এতটুকু জানি, ধন্যবাদ পাওয়ার আশায় তারা কিছু করেননি। আমি তাদের ভালোবাসার ঋণে আবদ্ধ সারা জীবনের জন্য। পুরোপুরি সেরে ওঠার পথ এখনও দীর্ঘ। আমাকে ও আমার পরিবারকে প্রার্থনায় রাখবেন। সবার জীবন সুন্দর ও শান্তিময় হোক। ভালোবাসা সবার জন্য।’
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন