টেকনাফে অপহৃত ১৮ শ্রমিক ‍উদ্ধার, আটক ২

১ সপ্তাহে আগে
কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে অপহৃত ১৮ শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদার পশ্চিমের গহীন পাহাড় থেকে স্থানীয় জনতা, বন বিভাগের সহায়তায় পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে।


এর আগে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে পাহাড়ে গাছের চারা রোপণ করতে গিয়ে ওই ১৮ জন অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। তবে সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ভোরে অপহৃত অপর ৯ জনকে এখনও উদ্ধার করা হয়নি।


বন বিভাগের টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ জানান, সোমবার সকালে হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া পাহাড়ে বনবিভাগের জমিতে গাছের চারা রোপণ করতে গিয়ে ১৮ জনকে অপহরণ করা হয়। রাতে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে ফোন দেন বলে তিনি জেনেছেন। মঙ্গলবার বিকালে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।


র‌্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জানান, উদ্ধার অভিযানে অপহরণে জড়িত দুজনকে আটক করা হয়েছে; একই সঙ্গে অপহরণ চক্রটিও শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।


আরও পড়ুন: পাহাড়ে আরও ৯ জনকে অপহরণ, যৌথ অভিযানের অনুমতি চান পুলিশ


টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, উদ্ধারদের পাহাড় থেকে বের করা হচ্ছে। তাদের থানায় আনা হলে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে।


এ দিকে মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে দুটি অটোরিকশা থামিয়ে চালকসহ আটজনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শামলাপুর সিএনজিচালিত অটোরিকশার লাইনম্যান মো. আবদুর রহিম।


তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে হোয়াইক্যং থেকে আসা শামলাপুরগামী দুটি সিএনজি অটোরিকশা হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে পৌঁছালে ঢালা থেকে ডাকাতদলের সদস্যরা চালকসহ ৮ জনকে অপহরণ করেছে বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তবে অপহৃতদের নাম-ঠিকানা জানা যায়নি।


এই বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শোভন কুমার শাহা জানান, হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে চালকসহ যাত্রী অপহরণের ঘটনা শুনে অভিযান চালানো হয়। কতজন অপহরণ হলেন সেটার সঠিক তথ্য এখনো জানা যায়নি। তবে অটোরিকশা দুটি উদ্ধার করা হয়েছে।


আরও পড়ুন: পাহাড়ে অপহরণ চক্রের সেই ‘বদরুজ’ অস্ত্রসহ গ্রেফতার


এর আগে সোমবার রাত ১১টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের বড় ডেইল এলাকার বাসিন্দার নাজিম উদ্দিন মাস্টারের ছেলে জসিম উদ্দিনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহারছড়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম।


তিনি জানান, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ১৫-২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে দক্ষিণ বড় ডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাস্তার মাথা নিজ মুদির দোকান থেকে জসিমকে অপহরণ করে পাহাড়ের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়। অপহরণের পর এখনও সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি।


জসিমকে উদ্ধারেও পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শোভন কুমার শাহা।


হ্নীলা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, পাহাড়ে থাকা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা একের পর এক অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এরপর মুক্তিপণ আদায় করে ধরে নিয়ে যাওয়া লোকজনকে ছেড়ে দেয়। সন্ত্রাসীদের দাবি করা টাকা না পেলে অপহৃতদের নানান ধরনের নির্যাতন করা হয়। এলাকার লোকজন অপহরণ আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করে আসছে।


আরও পড়ুন: পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করছে সেনাবাহিনী: বি. জে. আমান


কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, গত এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৯৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা, ৫৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।


টেকনাফ থানার তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে ১৪টি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত ৬৫ জন। এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৩০ জনকে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন