‘টাকা দিলে ছাড়, না দিলে হয়রানি’, টিআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ

২ সপ্তাহ আগে
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) এস এম ইস্রাফিলের বিরুদ্ধে সড়কে চলাচলকারী সিএনজি ও মোটরসাইকেলের কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে মামলা ও রেকার বিলের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় চালকরা অভিযোগ করেছেন, ইস্রাফিল নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন আটকান এবং অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেন, যা এলাকাবাসীর কাছে ‘ধরা-ছাড়ার বাণিজ্য’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রামগতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রতিদিন চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই করছেন টিআই ইস্রাফিল। তিনি কখনো নিজে, আবার কখনো তার নিয়োজিত সোর্সের মাধ্যমে সিএনজি ও মোটরসাইকেল আটকে রাখেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পরে বিশেষ ‘সমঝোতায়’ চাহিদামতো টাকা পেলে গাড়িগুলো ছেড়ে দেন।


এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, গাড়িগুলোর কাগজপত্রে ত্রুটি দেখিয়ে সেগুলো আগে থেকে নির্ধারিত কোনো গ্যারেজ, থানা কম্পাউন্ড অথবা মেকানিক দোকানে পাঠানো হয়। পরে ঘুষের টাকা আদায় করে সোর্সের মাধ্যমে মালিককে তা ফেরত দেয়া হয়। এসব ঘটনার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো রশিদ দেওয়া হয় না।


স্থানীয় একাধিক সিএনজিচালক অভিযোগ করেন, ‘রেকার বিল’ নামেও মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন ইস্রাফিল। অথচ ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিএনজির ক্ষেত্রে রেকার বিল করার কোনো নিয়মই নেই।


সিএনজি চালক মো. রায়হান বলেন, ‘আমার সিএনজি আটক করে পুলিশ নিয়ে যায়। অনেক অনুনয়-বিনয় করার পর তারা আমার কাছে ১,০০০ টাকা দাবি করে। টাকা দেওয়ার পর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ইস্রাফিল গাড়ি ছেড়ে দেন।’


আরেক চালক মো. ওমর ফারুক বলেন, তিনি সবসময় আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন চালক বলেন, ‘প্রতিদিন যদি এভাবে টাকা দিতে হয়, তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের এই পেশা ছেড়ে দিতে হবে।’


আরও পড়ুন: কুমিল্লায় ঘুষ নেয়ার অভিযোগে ভূমি অফিসের ২ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত


অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, অভিযুক্ত ইন্সপেক্টরের সঙ্গে নিয়মিত দেখা যায় স্থানীয় সাদ্দাম নামের এক ব্যক্তিকে, যিনি তার সোর্স হিসেবে কাজ করেন। এই সোর্সদের মাধ্যমেই অলিতে গলিতে যানবাহন আটক এবং ‘মধ্যস্থতা’ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিআই এস এম ইস্রাফিল উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমি আপনাদের চাকরি করি না, আমি কী করব সেটা আমার ব্যাপার। একই সঙ্গে তিনি প্রতিবেদনে এসব না লেখার জন্য অনুরোধ করেন।’


তবে তিনি দাবি করেন, ‘যেসব গাড়ি আটক করি, তাদের বিরুদ্ধে সুপারিশ আসে ফোনে। সুপারিশ না রাখায় উল্টো আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে।’


এদিকে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) প্রশান্ত কুমার দাস জানান, আমার কাছে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।


সহকারী পুলিশ সুপার (রামগতি-কমলনগর সার্কেল) মোহাম্মদ রকিবুল হাসান পিপিএম বলেন, ‘সড়কে অবৈধ যানবাহন যাচাই করা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব। তবে এ সুযোগে গাড়ি আটকিয়ে টাকা আদায় করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন