পরে সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে ঢাকাগামী ইউনাইটেড পরিবহন ও সৌখিন এক্সপ্রেস নামে দুটি পরিবহনের বাস চলচল এখনো বন্ধ রয়েছে।
পরিবহনশ্রমিকেরা আবু রায়হান নামের এক জুলাইযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করেছেন—এমন অভিযোগে এনসিপি নেতা–কর্মীরা শহরের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে অবস্থান নেন। আর পরিবহনশ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে পাল্টা অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকায়।
হালুয়াঘাটের বাসিন্দা আবু রায়হান ‘সি’ ক্যাটাগরির জুলাইযোদ্ধা। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দুটি টিকিট কেটে বাসে উঠতে গেলে বাসের স্টাফের সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়। এ সময় বাসের অন্য যাত্রীরা ধমক দিলে বাসের স্টাফ নেমে যায়। আমরা সিটে গিয়ে বসার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর বাসের স্টাফ সিটের কাছে গিয়ে আমার কলার চেপে ধরে বিশ্রী ভাষায় গালাগাল করে বুকে ধাক্কা দেয়। আমি কাউন্টারে গিয়ে অভিযোগ করতে করতে বাসটি আমাদের ছেড়ে চলে যায়।’
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সব বাধা-সংশয় কেটে গেছে: প্রেস সচিব
আবু রায়হান বলেন, ‘এই ঘটনার পর আমি বাসের মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কিন্তু তারা মালিকের নাম বলতে অনীহা প্রকাশ করে। এরপর আমি ফেসবুকে লাইভ করলে আমার পক্ষে সহযোদ্ধারা এসে দাঁড়ালে মালিক হিসেবে শামীম সাহেবের নাম আসে। সে সাগর হত্যার এজাহারভুক্ত আসামি। এখন পর্যন্ত তার বাসগুলো কীভাবে চলে, এর প্রতিবাদে আমরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করি।’
শহরের মাসকান্দা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল করে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার পর গতকাল রাত আটটা থেকে এনসিপির নেতা–কর্মী ও জুলাইযোদ্ধারা ইউনাইটেড গাড়ির কাউন্টারে তালা দিয়ে অবস্থান শুরু করেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ গিয়ে আলোচনা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় জুলাইযোদ্ধার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা এক শ্রমিককে পুলিশ আটক করে। এরপরও চার দফা দাবিতে অবস্থান অব্যাহত রাখেন এনসিপি নেতা–কর্মী ও জুলাইযোদ্ধারা।
শনিবারও মাসকান্দা বাস টার্মিনালের ঢাকাগামী ইউনাইটেড বাস কাউন্ডারের সামনে মাদুর পেতে এনসিপি নেতা–কর্মী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক নেতাদের অবস্থান কর্মসূচিতে দেখা যায়। পেছনে ব্যানারে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক ও জুলাই আন্দোলনের শহীদ রিদোয়ান হোসেন সাগরের ছবি। ব্যানারে লেখা, শহীদ সাগর হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও ময়মনসিংহের আত্মস্বীকৃত গডফাদার আমিনুল হক (শামীম)-এর মালিকানাধীন সব পরিবহন বন্ধসহ অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট।
অবস্থান কর্মসূচিতে জেলা এনসিপি নেতাদের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক নেতাদের দেখা যায়। তারা চার দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির কথা জানান। তাদের দাবিগুলো হলো- শামীমের সব গাড়ি অনতিবিলম্বে বন্ধ করে জব্দ করতে হবে; ফ্যাসিস্টের কর্মচারী যাঁরা এখনো মাসকান্দা বাসট্যান্ডে চাকরি করছেন, তাঁদের অবিলম্বে চাকরিচ্যুত করতে হবে; শহীদ সাগর হত্যায় শামীমসহ ময়মনসিংহের সব ফ্যাসিস্টকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে; যাত্রীদের সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং যেকোনো উৎসবে বিশেষ করে ঈদ-পূজার সময় গাড়ির ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না।
এদিকে দুপুর ১২টা থেকে ময়মনসিংহ-ঢাকা সড়কের দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকায় পরিবহনশ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইখতিয়ার আহমেদ বলেন, মাসকান্দায় কিছু ব্যক্তি ইউনাইটেড পরিহন বন্ধ করে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেছেন। এতে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম জানান, পরিবহন মালিক সমিতি এনসিপির দাবি মেনে নিতে রাজি হয়েছিল। তারা ১৬টি বাস ময়মনসিংহ রোডে চলাচল বন্ধ রাখবে। যেসব ফ্যাসিস্ট কর্মচারী রয়েছেন তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এরই মধ্যে এনসিপি ইউনাইটেডের ১৬টি গাড়ি জব্দ করার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু এই দাবি পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষে মানা সম্ভব হচ্ছে না। আদালতের হুকুম ছাড়া জেলা প্রশাসক গাড়ি জব্দ করতে পারেন না।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে ছেলের হাতে প্রাণ গেল বাবা-মায়ের, ঘরে মাটিচাপা দিলেন লাশ!
পরে বিকেলে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে প্রশাসন। এতে ইউনাইটেড পরিবহনের ব্যানারে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হক শামীমের ১৬ টি বাস চলাচল বন্ধ এবং জুলাই যোদ্ধা ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষের দাবির বিষয়ে সমাধানের আশ্বাসে বিকেল সাড়ে ৪টায় অবরোধ তুলে পরিবহন শ্রমিকরা। একইসঙ্গে জুলাই যোদ্ধারাও ইউনাইটেড পরিবহনের সামনে থেকে অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেয়।
এদিকে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিলেও ইউনাইটেড পরিবহনের ব্যানারে আ.লীগ নেতার ১৬টি বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবার ঢাকার মহাখালি ও ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাসট্যান্ড থেকে ইউনাইটেড এবং সৌখিন পরিবহনের সব বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহন ফেডারেশন।
]]>