জুলাই সনদ স্বাক্ষরের একদিন আগেও কাটেনি মতভিন্নতা

১ সপ্তাহে আগে
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের একদিন আগেও কাটেনি মতভিন্নতা, সনদে স্বাক্ষর করছে না সব দল। পটভূমিতে সঠিক ইতিহাস তুলে না ধরায় সই না করার ঘোষণা দিয়েছে বাম জোটের পাঁচ দল। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র তফসিল থেকে বাদ দিলে স্বাক্ষর করবে না গণফোরামও। সনদে সই করবে কি না, তা বিবেচনাধীন থাকার কথা জানিয়েছেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। আর সনদ স্বাক্ষর নিয়ে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলছেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন রাজনীতিবিদরা।


বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতি সমর্থন সীমাহীন নয়। ফেব্রুয়ারিতেই ভোট হতে হবে।


এসময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, কথার কথা নয়, ফেব্রুয়ারিতেই হবে উৎসবমুখর নির্বাচন।


জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের একদিন আগে ঐকমত্য কমিশনের 'অতি জরুরি' বৈঠক। নেতৃত্ব দেন কমিশনের সভাপতি, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে দেড় ঘণ্টা চলে বৈঠকটি। আলোচনা হয় জুলাই সনদ, নির্বাচনসহ প্রাসঙ্গিক সব বিষয়ে।


বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, কথার কথা নয়, ফেব্রুয়ারিতেই হবে নির্বাচন। বলেন উৎসবমুখর ভোট করতে সব পদক্ষেপ নেবে সরকার। সনদ ও নির্বাচন বিচ্ছিন্ন কোনো জিনিস নয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত বাস্তবে রূপান্তর করাই সরকারের লক্ষ্য।


আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন করতে হবে, বিকল্প নেই: সালাহউদ্দিন আহমদ


ড. ইউনূস বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। এটা এই যে ঐকমত্য কমিশনের যে সনদ, এটা সনদেরই অংশ এখন। এটার সঙ্গে এটা জড়িত। এই যে ঘোষণা আমরা করলাম, এটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। এটা এমন না যে কথার কথা বলে ফেলেছি।… ওই রকম না। এটা ফেব্রুয়ারিতে হবে এবং ওই যে বারবার বলেছি, এটা উৎসবমুখর নির্বাচন হবে।’


বৈঠকে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতি সমর্থন সীমাহীন নয়। ফেব্রুয়ারিতেই ভোট হতে হবে। বলেন, জুলাই সনদের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা নির্বাচনে জয়ী হবে তারা এটি বাস্তবায়ন করবে। নির্বাচন সামনে রেখে ঝুঁকি এড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।


বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন রাজনীতিবিদরা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই সনদের সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই। এই সংস্কার সারা জাতি চায়, আমরাও চাই। প্রধান উপদেষ্টার প্রতি সমর্থন সীমাহীন নয়। এই সংস্কার যে দলই ক্ষমতায় আসুক যারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাক তাদেরকে এটি বাস্তবায়ন করতেই হবে।’

 

৭২ এর মূলনীতি না থাকা এবং সনদের পটভূমিতে সঠিক ইতিহাস উল্লেখ নেই অভিযোগ করে সনদে স্বাক্ষর না করার কথা জানায় বাম গণতান্ত্রিক জোট। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র সংবিধানের তফসিল থেকে বাদ দিলে স্বাক্ষর না করার কথা জানায় গণফোরামও।


বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আগামী ১৭ তারিখ জুলাই সনদে এই পাঁচটি দল স্বাক্ষর করবো না।


গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের যে প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেন্ডেন্ট যদি সংবিধানের তফসিল থেকে বাদ দেয়া হয় তাহলে এই জুলাই সনদে গণফোরাম স্বাক্ষর করবে না।


নভেম্বরের মধ্যে গণভোটের দাবি জানায় ইসলামী আন্দোলন। আর সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্পষ্ট না করায় স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত বিবেচনাধীন থাকার কথা জানায় এনসিপি।


আরও পড়ুন: রাজনৈতিক দলে ভিন্নমত থাকলেও ঐক্যমতের ভিত্তিতে ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা সম্ভব: আলী রীয়াজ


ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি গণভোট নির্বাচনের আগে হবে। নভেম্বরের মধ্যে আমরা গণভোট দাবি করছি।’


এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের বিষয়ে আমরা স্বাক্ষর করবো কি করবো না সেই বিষয়গুলোকে আমরা বিবেচনাধীন রেখেছি। এই শর্তের উপরে কমিশন এবং সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতির কাছে পরিষ্কার রোডম্যাপ তারা উপস্থাপন করবে।


জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, স্বাক্ষর করার ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত জানাবে জামায়াত।


তিনি বলেন, আমরা দাওয়াত পেয়েছি এবং আমরা আশা করি সেই প্রোগামে আমরা যাব। স্বাক্ষরের ব্যাপারে মাত্র একদিন বাকি আছে। ওই দিন অনুষ্ঠানস্থলে গেলেই আপনারা দেখবেন।


১৫ অক্টোবরই শেষ হয়েছে ঐকমত্য কমিশনের বর্ধিত মেয়াদ। ১৭ অক্টোবর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন