খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ করার লক্ষ্যে ২০১২ সালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। স্থাপন করা হয় গ্যাস ট্রান্সমিশন ল্যান্ড ফিল্ডও। এরপর এক যুগ কেটে গেলেও খুলনার কোথাও সরবরাহ করা হয়নি গ্যাস। বছরের পর এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসছেও তা থেকেছে উপেক্ষিত।
তবে সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা আবারও তাদের দাবি জোরদার করেন। অবশেষে নতুন করে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয় সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। প্রথম পর্যায়ে খুলনা বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় সরবরাহ করা হবে এ গ্যাস।
আরও পড়ুন: ৭২ ঘণ্টা গ্যাসের স্বল্পচাপ থাকবে: পেট্রোবাংলা
এ লক্ষ্যে সম্প্রতি শুরু হয়েছে খুলনার আড়ংঘাটায় জিটিসিএল স্টেশন থেকে বিসিক শিল্পনগরী পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার পথে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ। পাইপ লাইন স্থাপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। এক মাস ধরে চলছে এই ব্যস্ততা। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো খুলনা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সাইড ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে আমরা পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করছি। প্রতিদিন আমাদের ৫০-৬০ জন দক্ষ শ্রমিক পাইপ স্থাপনের এ কাজ করছে। মোট তিনটি প্রতিষ্ঠান তিনটি ভাগে আড়ংঘাটা থেকে বিসিক শিল্পনগরী পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার এলাকায় পাইপলাইন বসাবে। আশা করছি আগামী মাসের মধ্যে এ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হবে।
এদিকে গ্যাস সরবরাহের খবরে উচ্ছ্বসিত এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি বিসিক শিল্প এলাকায় বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ার আশা তাদের।
বিসিক শিল্পনগরীর প্রতিষ্ঠান মিতালী ফুড ইন্ডাস্ট্রির ম্যানেজার ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলাম গ্যাস পাওয়ার জন্য। আমরা প্রতিনিয়ত খরচ করে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা কষ্ট হচ্ছিল। তবে এবার আমাদের দাবি শুনেছে গ্যাস কোম্পানি। পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, আমরা দ্রুতই গ্যাস সংযোগ পাব। গ্যাস সংযোগ পেলে আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক কমে আসবে।
বিসিক শিল্পনগরীর আরেক প্রতিষ্ঠান আয়েশা ফ্লাওয়ার মিলের ম্যানেজার মো. দীন ইসলাম বলেন, এমন উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ দিতে চাই। বিসিক শিল্পনগরীতে গ্যাস সরবরাহ হলে এখানকার সব প্রতিষ্ঠানই উপকৃত হবে।
আরও পড়ুন: নতুন গ্যাস সংযোগের খবরে যা বলছে তিতাস
খুলনা বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেছে, আমরা এরই মধ্যে এনওসি দিয়েছি তাদের। শিল্পনগরীতে অনেক প্রতিষ্ঠান লোকসানের কারণে বন্ধ হয়েছে। তবে আমরা আশা করি, গ্যাস সংযোগ দেয়া হলে বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও চালু হবে। সেইসঙ্গে ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানগুলোও লাভের মুখ দেখবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান হবে। সব মিলিয়ে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে সম্ভাবনা বাড়বে।
আশাবাদী গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিও। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার সরকার বলেন, বিসিক শিল্পনগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড সভায় আলোচনা হয়েছে। পাইপলাইন আগেই আড়ংঘাটা পর্যন্ত নেয়া ছিল। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিক শিল্পনগরীতে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। আশা করছি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষে বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় গ্যাসের সংযোগ দিতে পারব।
]]>