জিহ্বা কাটার পর বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা, মেয়ের মামলায় আটক ৩

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় আব্দুল হালিম মোল্লা (৬১) নামে এক বৃদ্ধকে জিহ্বা কেটে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনায় নিহতের একমাত্র মেয়ে রিনা বেগম (৩৭) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নিহত হালিম মোল্লা (৬১) আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পাড়াগ্রামের বাসিন্দা। তার স্ত্রী মারা গেছেন দীর্ঘদিন আগে। একমাত্র মেয়ে তাকেও বিয়ে দিয়েছেন। বাড়িতে একাই বসবাস করতেন তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।

জানা যায়, হালিম মোল্লার ছেলে সন্তান না থাকায় নিজের ও বাবার সম্পত্তি ভাইদের ছেলেদের দিয়ে দিতে হবে, তাই কতিপয় ব্যক্তি তাকে পরামর্শ দেন জমি বিক্রি করে তাদের কাছে টাকা রেখে দেয়ার জন্য। সেই মোতাবেক হালিম মোল্লা তার জমি বিক্রি করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা পান। এই টাকা এলাকার মিজানুর, শান্ত, মজিবরসহ কয়েকজনকে হাওলাত দেন তিনি।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে বৃদ্ধকে জিহ্বা কাটার পর কুপিয়ে হত্যা

গত শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে পাওনা টাকা চাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন হালিম মোল্লা। এরপর রাতে আর বাড়ি ফিরেননি তিনি। পরদিন রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে স্থানীয়রা বাড়ির অদূরে একটি বাগানে তাকে পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যদের খবর দেন। 

পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে বিকেলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন থেকে তিনি মারা যান।

নিহতের মেয়ে রিনা খাতুন বলেন, ‘আব্বা বাড়িতে একাই থাকতেন। আমি আমার শ্বশুরবাড়িতে থাকি। খবর পেয়ে বাড়িতে এসে আব্বাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে আব্বা মারা যান। আব্বা খুব সহজ সরল মানুষ ছিলেন। তিনি তার জমি বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছেন তা বিভিন্ন মানুষকে হাওলাত দেন।’

আরও পড়ুন: বরিশালে চাঁদার দাবিতে বৃদ্ধকে হত্যা, যুবদল নেতা গ্রেফতার

তিনি আরও বলেন, ‘ওই টাকা চাইতেই শনিবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হন। পরদিন রোববার সকালে স্থানীয় লোকজন অচেতন অবস্থায় বাড়ির অদূরে ফসলি জমিতে আব্বাকে পড়ে থাকতে দেখে বাড়িতে খবর দেন। আমার চাচারা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। আব্বার জিহ্বা কেটে ফেলা হয়, তা ছাড়া আঘাত করে দাঁত ভেঙে ফেলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়।’

রিনা খাতুন আরও বলেন, ‘আব্বাকে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেছি। আব্বার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাই।’

আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ জানান, খবর পেয়ে ওইদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আব্দুল হালিম মোল্যার মেয়ে রিনা বেগম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে মামলার এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। বাদী কারো নাম উল্লেখ করেননি।

ওসি আরও জানান, এলাকার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে। আশা করি দ্রুতই প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার করতে পারবো।

 

]]>