জামিন মেলেনি হলমার্ক গ্রুপের সেই চেয়ারম্যান জেসমিনের

৪ সপ্তাহ আগে
ভুয়া এলসির মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের মামলায় হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। তার জামিন আবেদনটি তিন মাস পর শুনানির জন্য আসবে বলে আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে বলেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

 

আদালতে জেসমিনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসিফ হাসান।

 

এর আগে ২০২২ সালে জেসমিন ইসলামকে এই মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।

 

আরও পড়ুন: হলমার্ক কেলেঙ্কারি /অর্থ আত্মসাৎকারীদের ফাঁসি হওয়া উচিত: আদালতের পর্যবেক্ষণ

 

ভুয়া এলসির বিপরীতে জনতা ব্যাংকের ৮৫ কোটি ৮৭ লাখ ৩৩ হাজার ৬১৬ টাকা আত্মসাতের মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৯ সালের ১০ মার্চ তাকে রুল মঞ্জুর করে জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগে আবেদন করে। একই বছরের ১৬ জুন আপিল বিভাগ তার জামিন বাতিল করে চার সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

 

এরপর জেসমিন ইসলাম আত্মসমর্পণ করেন। পরে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে আদালত রুল জারি করেন।

 

এদিকে ১৯ মার্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাদের পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেন আদালত।

 

এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরসহ ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত।

 

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া নয় জন হলেন- তানভীর মাহমুদ, তানভীর মাহমুদের স্ত্রী ও হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, তানভীরের ভায়রা হলমার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিযা, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, সাইফুল হাসান, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক ও আবদুল মতিন।  

 

দণ্ডিত বাকি আট আসামি হলেন- সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার, সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সফিজউদ্দিন এবং এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান। এই আটজনের মধ্যে জামাল উদ্দিনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকিদের ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

 

আসামিদের মধ্যে জামাল উদ্দিন ও আলতাফ হোসেন জামিনে রয়েছেন। আর পলাতক রয়েছেন সাইফুল ইসলাম, আবদুল মতিন, হুমায়ুন কবির, গোপাল নাথ, তসলিম, সাইফুল হাসান, মেহেরুন্নেসা ও জাকারিয়া। কারাগারে আছেন তানভীর, তুষার, জেসমিনসহ অপর আটজন।

 

আরও পড়ুন: হলমার্ক কেলেঙ্কারি /তানভীর-জেসমিনসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন
 

মামলার সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের হিসাবে সুতা রফতানির নামে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের সুতা রফতানি করা হয় বলে নথিপত্রে দেখানো হয়। ওই হিসাবে পুরো অর্থ জমা করা হলে তা থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা হলমার্কের আরেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। যা পরে তানভীর ও তার স্ত্রী তুলে নেন।

 

এরপর ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক। ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা মামলার অভিযোগ গঠন করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বদলির আদেশ দেন।

 

এ মামলার আসামিরা হলেন-হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, তানভীরের ভায়রা ও গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ। টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক ও সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার।

 

এছাড়া সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখার সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন ও সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম অফিসের জিএম ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, ডিএমডি মাইনুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন ও সফিজউদ্দিন এবং এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান। এর মধ্যে আসামি জামাল উদ্দিন সরকার, আলতাফ হোসেন জামিনে রয়েছেন। এছাড়া সাইফুল, মতিন, হুমায়ুন, গোপাল নাথ, তসলিম, সাইফুল, মেরী ও জাকারিয়া পলাতক রয়েছেন।  

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন