পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তিই আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তার প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের জন্য কোনো ভয় ও মর্মবেদনার অবকাশ নেই।’ (সুরা বাকারা ৬২)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘এ আনুগত্য (ইসলাম) ছাড়া যে ব্যক্তি অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায় তার সে পদ্ধতি কখনোই গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ব্যর্থ, আশাহত ও বঞ্চিত। (সুরা আলে ইমরান ৪৫)
অর্থাৎ জান্নাত শুধু ঈমান ও আমলদার ব্যক্তিদের জন্য, যারা যুগে যুগে পয়গম্বরদের আনীত শরিয়তের মধ্যে নিজেদের সমর্পিত করেছে। অন্যকোনো পদ্ধতি অবলম্বনকারীদের জন্য জান্নাত নয়। কিন্তু সব ব্যাপারে ঠিকঠাক থাকার পরও কিছু দুর্ভাগা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। হাদিসের আলোকে এমন সাত শ্রেণির মানুষের পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো।
আরও পড়ুন: শীতে নাক, মুখ ও কপাল ঢেকে নামাজ পড়া যাবে কি?
জনগণের কল্যাণ চায় না যে শাসক
হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ (রহ.) হজরত মাকিল ইবনে ইয়াসারের মৃত্যুশয্যায় তাকে দেখতে গেলেন। তখন মাকিল (রা.) তাকে বললেন, তোমাকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করছি, যা আমি নবীজি (স.) থেকে শুনেছি। আমি নবীজি (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তাআলা যদি কোনো ব্যক্তিকে জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করেন, আর সে কল্যাণ কামনার সঙ্গে তাদের তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না সে।’ (বুখারি ৭১৫০)
যে নারী কথায় কথায় স্বামীর কাছে তালাক চায়
হজরত সাওবান (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যদি কোনো মহিলা তার স্বামীর কাছে অহেতুক তালাক চায়, তাহলে তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম হয়ে যায়।’ (আবু দাউদ ২২২৬)
নিজের বাবাকে অস্বীকারকারী
হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অপর ব্যক্তিকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, সে জান্নাতের সুবাসটুকুও পাবে না। অথচ পাঁচশ বছরের দূরত্ব থেকে জান্নাতের সুবাস পাওয়া যাবে।’ (ইবনে মাজাহ ২৬১১)
আরও পড়ুন: ভ্রমণে নিরাপদ থাকার দোয়া
নিরাপত্তা চুক্তিকারীকে যে হত্যা করে
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, নবীজি (স.) বলেছেন, সাবধান! যে লোক সন্ধি-চুক্তি করে আল্লাহ ও তার রসুলের নিরাপত্তা নিয়েছে তাকে যে লোক খুন করল সে আল্লাহ তাআলার জিম্মাদারিকে ছিন্ন করল। সে জান্নাতের সুগন্ধটুকুও লাভ করবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ ৭০ বছরের পথের দূরত্ব হতেও পাওয়া যায়।’ (তিরমিজি ১৪০৩)
কালো খেজাব ব্যবহারকারী
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, শেষ যুগে এমন সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হবে, যারা কবুতরের গলায় থলের মতো কালো রঙের খেজাব লাগাবে। তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না’ (আবু দাউদ ৪২১২)। তবে, চুলের যত্ন না নেওয়া, অসুস্থতা কিংবা ক্যামিকেলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত ইত্যাদি কারণে অপরিণত বয়সেই চুল-দাড়ি সাদা হয়ে গেলে কালো খেজাব ব্যবহার বৈধ বলে অনেক আলেম মত দিয়েছেন। (ফায়জুল কাদির: ১/৩৩৬) বার্ধক্যের আগেই চুল-দাড়ি সাদা হয়ে হয়ে গেলে যুবকদের জন্য সতর্কতাস্বরূপ একেবারে কালো খেজাব ব্যবহার না করে লাল-কালো মিশ্রিত খেজাব ব্যবহার করা উচিত। (তুহফাতুল অহওয়াজি ৫/১৫৪)
যেসব নারী পোশাক পরলেও মূলত বিবস্ত্র
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জাহান্নামবাসী দুই ধরনের লোক এমন আছে যাদের আমি (এখনো) দেখতে পাইনি। একদল লোক, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে পেটাবে। আর এক দল স্ত্রীলোক, যারা বস্ত্র পরিহিত হয়েও বিবস্ত্রা, (সুখ সম্পদ ভোগকারী হয়েও অকৃতজ্ঞ), যারা অন্যদের আকর্ষণকারী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুজের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার খুশবুও (ঘ্রাণ) পাবে না। অথচ, এত এত দূর থেকে তার (জান্নাতের) খুশবু পাওয়া যায়। (মুসলিম ৫৩৯৭)
দুনিয়ার স্বার্থে যারা ইলম শিখে
আরও পড়ুন: হাসিমুখে কথা বলার গুরুত্ব ও ফজিলত
রসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ইলম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা হয়, সেই ইলম যদি কোনো ব্যক্তি দুনিয়াবি স্বার্থ-সম্পদ হাসিলের উদ্দেশে শিক্ষা করেন, তিনি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেন না।’ (আবু দাউদ ৩১৭৯)
]]>