চোগলখোরের পরিচয় ও পরিণাম

১ সপ্তাহে আগে
অন্যের কাছে নিজেকে ভালো প্রমাণের জন্য বা নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে ব্যক্তি অন্যের বদনাম করে একজনের সাথে অন্যের দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেয় তাকে চোগলখোর বলে।

চোগলখুরীর কারণে মানুষের মাঝে ফেতনা সৃষ্টি হয়। পরস্পরের ভালো সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। পারস্পরিক দুশমনি বৃদ্ধি পায়। হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি হয়। এ কারণেই চোগলখোর বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং প্রিয়নবি।

 

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

সাবধান! আমি তোমাদেরকে জানাচ্ছি চোগলখুরি কী? এ হচ্ছে কুৎসা রটনা করা; যাতে মানুষের মাঝে বৈরিতা সৃষ্টি হয়।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি সত্য কথা বলতে বলতে সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়; আবার কেউ মিথ্যা বলতে বলতে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।

 

কোরআনে আল্লাহ তাআলা চোগলখোরদের নিন্দা জানিয়েছেন। কোরআনের এ আয়াত থেকেও চোগলখোরের পরিচয় প্রকাশ পায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং অনুসরণ কর না তার; যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত। পশ্চাতে নিন্দাকারী; যে একের কথা অপরের কাছে কথা লাগিয়ে বেড়ায়।’ (সুরা কলাম ১০-১১)

 

আরও পড়ুন: আল্লাহ কৃতজ্ঞকে নেয়ামত বাড়িয়ে দেন এবং অকৃতজ্ঞকে শাস্তি দেন

 

হাদিসের অন্য জায়গায় এসেছে, ‘কিয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোকদের দলভুক্ত হিসেবে ওই ব্যক্তিকে দেখতে পাবে; যে ছিল দু’মুখো- যে এক জনের কাছে এক কথা আরেক জনের কাছে আরেক কথা নিয়ে হাজির হত।’ (মুসলিম)

 

চোগলখোরের পরিণাম ভয়াবহ। আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘চোগলখোর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)

 

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) করেন রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন মদিনার একটি খেজুর বাগান দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেখানে তিনি দুই ব্যক্তির আহাজারি শুনতে পেলেন। তখন তাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। প্রিয়নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ (ব্যক্তি) দু’জনকে বড় কোনো কারণে আজাব দেয়া হচ্ছে না; অবশ্য এগুলো কবিরা গোনাহ। তাদের একজন প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করত না; আর অন্যজন চোগলখুরি করে বেড়াত।’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)

 

বর্তমান সময়ে চোগরখুরির মতো নিকৃষ্ট প্রক্রিয়ার কারণে পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীতে অশান্তি ও কলহ বিরাজ করছে। কর্মস্থলে কিংবা অফিসে কর্মী এবং দায়িত্বশীলদের মাঝে বিরূপ মনোভাবও তৈরি হচ্ছে এ চোগলখুরির কারণে।

 

আরও পড়ুন: গোঁফে লাগা খাবার ও পানি কি হারাম?

 

যদিও চোগলখোর স্বামী/স্ত্রী, পরিবার বা অফিস-আদালতে সাময়িকভাবে তার কর্মকাণ্ডে কর্তাব্যক্তি বা দায়িত্বশীলদের কাছে আস্থা অর্জন করে থাকে মূলত তা ওই ব্যক্তির জন্য দুনিয়া এবং পরকালে মহাক্ষতির কারণ। দুনিয়াতে সে চোগলখোর হিসেবে হয় লাঞ্ছিত বা ধিক্কৃত আর পরকালে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যায়।

 

চোগলখুরি করা হারাম এবং বড় গোনাহের কাজ। হাদিসের পরিভাষায়ও চোগলখুরি কবিরা গোনাহ এবং জান্নাতের অন্তরায়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সব পর্যায়ে চোগলখুরি পরিহার করা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন