১৯৯২ সালে ওমানের প্রাক্তন শাসক সুলতান কাবুস বিন সাইদ এই মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ছয় বছর ধরে এর নির্মাণ কাজ চলে এবং অবশেষে ২০০১ সালের ৪ মে এটি জনসাধারণের জন্য খোলা হয়।
এই মসজিদে প্রায় ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রধান নামাজ ঘরে ৬ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। নারীদের জন্য এখানে আলাদা নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের পাঁচটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে, যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রতীক। এর মধ্যে প্রধান মিনারটি প্রায় ৯০ মিটার উঁচু।
আরও পড়ুন: বিশ্বের মুসলমানদের জন্য এ মসজিদটি গর্বের প্রতীক
মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এর বিশাল ঝাড়বাতি এবং কার্পেট। প্রধান গম্বুজের নিচে যে ঝাড়বাতিটি ঝুলছে, সেটি ৮ মিটার দীর্ঘ এবং বিশ্বের বৃহত্তম ঝাড়বাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি সম্পূর্ণ স্বর্ণ দিয়ে মোড়ানো এবং এতে অসংখ্য ক্রিস্টাল ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের মূল নামাজ কক্ষে যে কার্পেটটি বিছানো আছে। সেটিও একসময় বিশ্বের বৃহত্তম হাতে বোনা কার্পেট ছিল। প্রায় ৬০ লক্ষ গিঁট দিয়ে তৈরি ২১ টন ওজনের এই কার্পেট তৈরি করতে ইরানের প্রায় ৬০০ জন কারুশিল্পীর চার বছর সময় লেগেছিল।

মসজিদের ভেতরের দেয়াল, ছাদ এবং মেহরাব জুড়ে রয়েছে নয়নাভিরাম ইসলামিক নকশা। পারস্য, উসমানীয় এবং মুঘল স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণে তৈরি এই মসজিদে সাদা ও ধূসর মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে। কোরআনের বিভিন্ন আয়াত দিয়ে মসজিদের ভেতর ও বাইরের অংশ সাজানো হয়েছে।
এ মসজিদ শুধু ইবাদতের স্থান নয়, এটি ইসলামি সংস্কৃতি ও জ্ঞানের চর্চার কেন্দ্রও। এখানে একটি বিশাল ইসলামি গ্রন্থাগার রয়েছে, যেখানে ২০ হাজারের বেশি বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। ইসলামি ইতিহাস, বিজ্ঞান, ফিকাহশাস্ত্র এবং অন্যান্য বিষয়ে গবেষণা করার সুযোগও রয়েছে এখানে।
আরও পড়ুন: সংস্কারের অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে ৫৫০ বছরের মসজিদটি
সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মসজিদ শুধু মুসলমানদের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। এটি বিশ্বের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য এবং শান্তির বার্তা পৌঁছে দেয়ার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। একইসাথে, এটি ওমানের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে, যা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় সম্প্রদায়ের কাছে এটিকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।