চেঙ্গী নদীর ওপর ব্রিজ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ

২ সপ্তাহ আগে
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও খাগড়াছড়ি জেলা সদরে চেলাছড়া এলাকায় চেঙ্গী নদীর ওপর তৈরি হয়নি ব্রিজ। শুধুমাত্র একটি ব্রিজের অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে খাগড়াছড়ির চেলাছড়ার এলাকার হাজার হাজার মানুষ। বর্ষাকালে নৌকা আর খরার সময় বাঁশের সাঁকো পথচারী ও শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা। এমনকি বন্যায় পারাপার করতে গিয়ে নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অনেকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ৪নং পেরাছড়া ইউনিয়নের পেরাছড়া থেকে চেলাছড়াসহ ১২টি গ্রামের মানুষ যাতায়াতের একমাত্র পথ হচ্ছে চেঙ্গী নদীর ওপর দিয়ে। এছাড়াও পাশের মাটিরাঙ্গা উপজেলায় গোমতি ইউনিয়নবাসীও আসা-যাওয়া করে থাকেন এ পথ দিয়ে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের ।


গ্রামবাসী যোগেশ্বর ত্রিপুরা বলেন, ‘চেঙ্গী নদীতে ব্রিজ না হওয়ার ফলে আমাদের ছেলে মেয়েরা নদী পারাপার করতে গিয়ে নৌকা ডুবে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এর মধ্যে নদীতে পড়ে মারা গেছে বিন্দু ত্রিপুরা, চিত্ত ত্রিপুরা, বনানী ত্রিপুরা নামে ৪ শিক্ষার্থী। শুধুমাত্র  একটি ব্রিজের অভাবে ৪ হাজার পরিবার বেশি আমরা ভুক্তভোগী।


তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসা ক্ষেত্রেও আমাদের দুর্ভোগ চরমে। মালামাল আনা নেয়ার ক্ষেত্রে নদী পারাপারের জন্য বাড়তি শ্রমিক নিয়োগ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ডাবল খরচ হয়। এ নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হলে এলাকার পিছিয়ে পড়া জনসাধারণের জীবনমানেরও উন্নতি হবে। ব্যবসা বাণিজ্য সমৃদ্ধি হবে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজে হাটবাজারে নিয়ে আসতে পারবে।’

আরও পড়ুন: অসময়ে যমুনার ভাঙনে দিশেহারা জামালপুরের মানুষ


অপর গ্রামবাসী প্রদীপ ত্রিপুরা বলেন, ‘আমাদের চেঙ্গী নদী পারাপার করতে হয় প্রত্যেকদিন। কোনো না কোনো কারণে বাজারে যাওয়া আসা লাগে। ফলে চেঙ্গী নদীর ওপর দিয়ে আসা-যাওয়া করে থাকে চেলাছড়া পাড়া, কাপতলা পাড়া, পল্টনজয় পাড়া, বাঙ্গামুড়া, বাউড়া পাড়া, বাঁনতৈসা, লারমা পাড়া ও হাজাছড়াসহ আরও কয়েকটি গ্রামের লোকজনকে।’ 


তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার এলাকাটি জীবন জীবিকা ক্ষেত্রে কৃষি নির্ভর। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যগুলো কেরিং করে নদী পারাপার করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতা শিকার হতে হয়। তাই আমরা চাই স্থায়ী ব্রিজ।’


চেলাছড়ার গ্রাম প্রধান (কার্বারী) মনুরেম ত্রিপুরা বলেন, ‘গত সরকার আমলে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি ব্রিজের জন্য কোনোভাবে রেসপন্স পাইনি। নতুন সরকার কাছ থেকে আমার গ্রামবাসী পক্ষে ব্রিজ দাবি করছি। তাছাড়া আমাদের এলাকার পরেই একটি সুন্দর  ‘হাতি মোড়া’ রামের একটি সুন্দর পর্যটন গড়ে উঠছে। পর্যটন শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে ব্রিজটি যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের আশা।’


স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদীর পূর্বপাড়ে রয়েছে পেরাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পেরাছড়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং আর পশ্চিমপাড়ে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বর্ষাকালে নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওইসব গ্রামের বাসিন্দাদের হাট-বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদরে অফিস, আদালত আসার জন্য দীর্ঘসময় খেয়া নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় চেপে শিক্ষার্থীদের নদী পারাপার হতে হয়। চাষিরা ফসল ঘরে তুলতে গিয়েও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। তাদের খরচ বেশি হচ্ছে। ফসল বাজারে নেওয়ার সময়ও চরম কষ্ট করতে হয় চাষিদের।

আরও পড়ুন: ১৮ কিমি সড়কের ১২ ব্রিজ-কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ

শিক্ষার্থী মোহনা ত্রিপুরা বলেন, ‘বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়া আসার ক্ষেত্রে আমাদেরকে চেঙ্গী নদী পাড় হয়ে যেতে হয়। মাঝে মধ্যে নৌকা ডুবে যায়, ফলে পরীক্ষার সময় মতো পৌঁছতে পারি না।’


পেরাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিম্বিসার খীসা বলেন, ‘নদীর ওপর একটি ব্রিজ খুব প্রয়োজন।’ 


তিনি বলেন, ‘সেতু না থাকায় আমাদের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে ভোগান্তিতে আছে প্রতিবছর বন্যার পানিতে বাঁশের সাঁকোটিও ভেসে নিয়ে যায়। তখন পূর্বপাশের শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে না পারায় শিক্ষার্থী সংকট দেখা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের নদী পারাপারে দুর্ভোগের অন্ত থাকে না।’


স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমা বলেন, ‘প্রস্তাবিত ব্রিজটি এলজিইডি আইডিভুক্ত সড়কের অন্তর্ভুক্ত কিনা তা আগে যাচাই করে দেখতে হবে, যদি সড়কটি প্রস্তাবিত হয়। ব্রিজটি যদি এলজিইডির আওতাভুক্ত সড়কের মধ্যে পড়ে তাহলে তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তাব যাচাই বাছাই করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করা হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন