চীনের সহায়তায় মোংলায় বড় প্রকল্প, খুলছে সম্ভাবনার দ্বার

১ সপ্তাহে আগে
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র মোংলা বন্দরের দৃশ্যপট বদলে যেতে চলেছে। চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন’ শীর্ষক একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

প্রায় ৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দর পরিণত হবে দেশের একটি আধুনিক, গতিশীল ও কর্মসংস্থানমুখী সমুদ্র বন্দরে বলে মত বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের।


রাজধানীর সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় গত দুই বছর ধরে মোংলা বন্দরের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে আমদানি-রফতানিকারকদের। কিন্তু জেটি সংকট, নদীর গভীরতা হ্রাস, আধুনিক অবকাঠামোর অভাবসহ নানা সীমাবদ্ধতায় এখনও পিছিয়ে আছে বন্দরটি।

আরও পড়ুন: চীনের উপহারে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য তিস্তা তীর পরিদর্শন

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলেও মোংলা বন্দরে আমরা তার সুবিধা ভোগ করতে পারছি না বন্দরের নানা সীমাবদ্ধতার কারণে। এর মধ্যে নদীর নাব্য কম থাকা, কন্টেইনার কম থাকা, আধুনিক যন্ত্রপাতি কম থাকা অন্যতম। আমাদের বহুদিনের দাবি ছিল মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন।’


এসব সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে বন্দরের উন্নয়নে এবার বড় ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন’ শীর্ষক নতুন এই প্রকল্পটি নিয়ে চীনের সঙ্গে চুক্তিও হয়ে গেছে।
জি-টু-জি ভিত্তিক এই প্রকল্পের আওতায় চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের (CCECC) সঙ্গে ২০২৫ সালের ২৫ মার্চ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে ২০২৮ সালে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৮২.৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ৫০০.৩৯৯৭ কোটি টাকা এবং চীন সরকার প্রকল্প ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ৩৭৮২.৩৬ কোটি টাকা।

 

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র মোংলা বন্দরের দৃশ্যপট বদলে যেতে চলেছে। ছবি: সময় সংবাদ


প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হবে দুইটি ৩৬৮ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জেটি, আধুনিক কন্টেইনার টার্মিনাল, ডেলিভারি ইয়ার্ড, বহুতল কার ইয়ার্ড, ডুবন্ত রেক অপসারণ, প্রধান সড়ক উন্নয়ন ও শিট পাইলিংসহ নানা অবকাঠামো। পাশাপাশি আধুনিক ইকুইপমেন্ট ও অটোমেটেড অপারেশন সিস্টেম স্থাপন করা হবে।


মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ কে এম আনিসুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ১.৫ কোটি টনে উন্নীত হবে। এছাড়া ৪ লাখ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে, যা এই বন্দরের সক্ষমতা এবং আঞ্চলিক গুরুত্ব বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।’

আরও পড়ুন: মোংলা বন্দর হবে আঞ্চলিক হাব: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যেসব সুফল পাওয়া যাবে:

বার্ষিক ১.৫০ কোটি টন কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা অর্জন হবে, যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি।

৪.০০ লক্ষ টিইইউ (TEUs) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে, যা দেশের কন্টেইনার পরিবহন সক্ষমতায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।

শিপিং এজেন্ট, সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট, স্টিভেডরিং কোম্পানি ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

বন্দরের অপারেশনাল সময় কমে আসবে, দক্ষতা বাড়বে, ফলে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় আরও গতি আসবে।

উপকূলীয় অঞ্চলে আধুনিক বাণিজ্যিক অবকাঠামো গড়ে ওঠার সম্ভাবনা বাড়বে, যা দেশীয় বিনিয়োগ ও বিদেশি বিনিয়োগ উভয়কে আকৃষ্ট করবে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতেও নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। 


খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খান মেহেদী হাসান বলেন, ‘এই বিনিয়োগ শুধু অবকাঠামো নয়, বরং এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সক্ষমতার অংশ । এতে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে।’

আরও পড়ুন: মোংলায় একসঙ্গে ভিড়েছে ৩ বিদেশি জাহাজ, অবস্থান ১৭টির

এ প্রকল্প ছাড়াও মোংলা বন্দরে আরও অন্তত ৮টি প্রকল্প চলমান আছে। এর মধ্যে আছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে ‘আপগ্রেশন অব মোংলা পোর্ট’, ‘ইনার বার ড্রেজিং’, পিপিপির মাধ্যমে দু’টি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণসহ গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।


সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে পশুর নদীর পূর্ব তীরে ১৯৫০ সালে স্থাপিত মোংলা বন্দরে বর্তমানে পাঁচটি জেটিতে ২২টি নোঙর পয়েন্টে একসঙ্গে ৪৭টি জাহাজ ভিড়তে পারে। এসব উন্নয়ন কাজ শেষ হলে এই সক্ষমতা বহুগুণে বাড়বে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন