চার লোহার সেতু যেন দীঘিনালার-লংগদুর গলার কাঁটা

৩ সপ্তাহ আগে
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কপথের এক মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে চারটি পুরোনো লোহার সেতু। এসব সেতু, যা বেইলি ব্রিজ নামে পরিচিত, দীর্ঘদিন ধরেই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ভারী যান চলাচলের সময় সেতুর পাটাতন দেবে গিয়ে প্রায়ই যোগাযোগ ব্যবস্থার স্থবিরতা সৃষ্টি হয়, এবং বহুদিন পর্যন্ত পণ্যবাহী গাড়ি আটকা পড়ে থাকে। সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন দীঘিনালা ও লংগদুর বাসিন্দারা।

এ চারটি বেইলি ব্রিজের মধ্যে রয়েছে- বোয়ালখালীছড়া ব্রিজ, মেরুং বাজার ব্রিজ-১ ও ২ এবং বেতছড়ি ব্রিজ। এসব সেতু এতটাই পুরোনো যে, পণ্যবোঝাই ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান এগুলোর উপর দিয়ে চলাচল করলে প্রায়ই সেতুর পাটাতন দেবে যায় এবং ফলে সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলশ্রুতিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ ও মালামাল একাধিক দিন আটকে পড়ে থাকে, যেটি সাধারণ জনগণের জন্য এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


দীঘিনালা ও লংগদু পাহাড়ি অঞ্চল হলেও সড়কপথে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদিও প্রশাসনিকভাবে লংগদু উপজেলা রাঙামাটি জেলার অন্তর্গত, ভৌগোলিকভাবে এর যোগাযোগ খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালার সাথে। এই সড়কপথটি শুধু স্থানীয়দের জন্য নয়, বরং খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।


সড়কপথটি ব্যবহার করে চাষিরা তাদের কৃষিপণ্য, গবাদিপশু, তামাক, বনজ দ্রব্য, কাঠ, আদা, হলুদ, কলা, আনারস, বাঁশ-বেতসহ নানা পণ্য দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি নিয়ে আসে, এবং সেখান থেকে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়।


দীঘিনালা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি এবং মেরুং ইউনিয়নের বাসিন্দা ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'প্রায়ই এই সেতুগুলোর পাটাতন দেবে যায় এবং যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভারী যানবাহন চলাচল ও বন্যার কারণে সেতুগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। এর ফলে আমাদের স্থানীয় জনগণের জন্য এই সড়ক যোগাযোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।'


আরও পড়ুন: বরগুনায় ৩৫৭ লোহার সেতু ঝুঁকিপূর্ণ, ঘটছে দুর্ঘটনা


দীঘিনালা উপজেলা তরুণ সমাজকর্মী আকতার হোসেন বলেন, 'দীঘিনালা উপজেলার অর্ধেকের বেশি বাসিন্দা এই সড়কের ওপর নির্ভরশীল। সেতুর ক্রমাগত ক্ষতির ফলে এলাকার মানুষের যাতায়াত আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এই সড়কটি পাহাড়ি পথে আঁকাবাঁকা এবং চওড়াও মাত্র ১২ ফুট। ফলে দুইটি গাড়ি মুখোমুখি হলে অনেক সময় পণ্য বা যাত্রীবাহী যান আটকে যায়।'


খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'বেইলি ব্রিজের পাটাতন দেবে যাওয়া ও বর্ষাকালে পানি জমে যাওয়ার কারণে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বারবার বিপত্তি সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় আমাদের গাড়ি একাধিক দিন আটকা পড়ে থাকে, যা অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির কারণ।'


আরও পড়ুন: যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বান্দরবানের ‘বেইলি ব্রিজ’


খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, 'এই চারটি সেতু অনেক পুরোনো। এসব সেতুর ওপর দিয়ে ৫ টনের বেশি ভারী যান চলাচলের কোনো বিধিনিষেধ থাকলেও, এটি প্রায়ই লঙ্ঘিত হয়। ফলে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।'


তিনি আরও বলেন, সেতুগুলোর সংস্কার কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং অনেক সময় দ্রুততম সময়ে সেতু মেরামত করা হয়। তবে, তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি অনুরোধ জানান যে, সেতুগুলোর ওপর অতিরিক্ত ওজনের পরিবহন চলাচল না করলেই ভালো হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন