চা বাগানগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়

৩ সপ্তাহ আগে
খরার কবলে পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলো। এরইমধ্যে জেলার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাগানের চারা গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। পাতার অভাবে চালু করা যায়নি অধিকাংশ চা কারখানা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, চা গাছের সবুজ পাতা পানির অভাবে ধারণ করেছে ধূসর রঙ। গাছের গোড়ার মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।

 

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে মরে যাচ্ছে গাছ। এরইমধ্যে খরার কারণে জেলার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাগানের চারা গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। কাঙ্ক্ষিত নতুন কুঁড়ি বা চা পাতার অভাবে অধিকাংশ কারখানা চালু করা যায়নি। এতে গেল বছরের মতো এ বছরও চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

 

খরার কবলে মৌলভীবাজারের চা বাগান। ছবি: সময় সংবাদ

 

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত বছর মার্চ মাসে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর চলতি বছর মার্চে এসে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ৪ মিলিমিটার।

 

আরও পড়ুন: প্রুনিংয়ে নতুন স্বপ্ন বুনছে পঞ্চগড়ের চা চাষিরা

 

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. আনিসুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, 

সাধারণত এ সময়ে এসে চা অঞ্চলে ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। গত বছরের মার্চ মাসে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। অথচ চলতি বছরের মার্চে এসে মাত্র ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুধু তাই না, গেল পাঁচ মাসে এ অঞ্চলে কোনো বৃষ্টিপাত নেই। এতে জেলার সবকটি চা বাগান খরার কবলে পড়েছে।

 

এদিকে একাধিক চা বাগান ব্যবস্থাপক জানান, নিয়ম অনুযায়ী চায়ের অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে শীত মৌসুমে চা গাছ নানা পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রুনিং করা হয়ে থাকে (চা গাছ ছাঁটাই)। এ বছরও মৌলভীবাজারের বাগানের চা গাছ নিয়ম মতোই প্রুনিং হরা হয়। পরবর্তীকালে সার এবং ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে অথবা মার্চ এসে বৃষ্টিপাত হলেই গাছে গাছে সবুজ পাতায় ভরে উঠে। এবার ঘটেছে উল্টা চিত্র। পানির অভাবে চা গাছে ভালোভাবে নতুন পাতা আসেনি। কাঙ্ক্ষিত নতুন কুঁড়ি বা চা পাতার অভাবে বাগানের অধিকাংশ কারখানা চালু করা যায়নি। চা বাগানজুড়ে এখন সুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের অভাবে বাগানজুড়ে দেখা দিয়েছে নানা রোগবালাই। রেডস্প্রাইডারের ভয়াবহ আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো প্রতিকার আসছে না। আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো কোনো বাগানে পানি সেচ দিয়েও কাঙ্ক্ষিত পাতা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে গেল বছরের মতো এ বছরও চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দেখা দিয়েছে সংশয়।

 

আরও পড়ুন: খরচের তুলনায় বেশি লাভ, সয়াবিন আবাদে ঝুঁকছেন লক্ষ্মীপুরের চাষিরা

 

খরা মোকাবিলায় সেচের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট শাখার চেয়ারম্যান জি এম শিবলী।

 

এ বছরও চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ছবি: সময় সংবাদ

 

তিনি বলেন, 

চা উৎপাদনের মৌসুমে এসেই প্রচণ্ড খরার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ফিনলে কোম্পানির বাগানগুলোতে আধুনিক সেচের মাধ্যমে চা গাছকে বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে। এখনো প্রুনিং করা গাছে পাতা আসেনি। এতে তাদের ৮টি কারখানা চালু করা যায়নি।

 

আর বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনিস্টিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মো. ইসমাইল হোসেন চা বাগানকে খরার কবল থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছায়াবৃক্ষ রোপণ, গাছ প্রুনিংয়ের পর ভালোভাবে ছাঁটাই ও আদিকালের পদ্ধতি কচুরিপানা প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন।

 

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্যমতে, চলতি বছর দেশে ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন