এতে রামপুরা ছাড়াও বাড্ডা, ওয়াপদা ও মেরাদিয়াসহ সমগ্র এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। ছাত্র-জনতার বিপক্ষে পুলিশের অবস্থান এতটাই আক্রমণাত্মক ছিল যে, একপর্যায়ে তাদের গুলিও শেষ হয়ে যায়। এরপর পুলিশকে ঘিরে ফেলে ছাত্র-জনতা। পরে তাদের উদ্ধার করতে হেলিকপ্টার পাঠাতে হয় তৎকালীন সরকারকে।
পরের ঘটনা আরও ভয়াবহ, নৃশংস। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তাণ্ডব বেড়ে যায় কয়েক গুণ। হাসপাতালের ভেতরে থাকা চিকিৎসকও রেহাই তাদের পাননি বন্দুকের নল থেকে।
ছাত্রদের ওপর পুলিশ, বিজিবি আর তৎকালীন ছাত্রলীগ কর্মীদের উন্মত্ততা দেখে এলাকার দোকানদার থেকে শুরু করে বাবুর্চি সবাই নেমে আসেন রাজপথে। সেসব দিনের কথা ভেবে এখনও শিউরে ওঠেন এ এলাকার মানুষ।
আরও পড়ুন: স্বৈরাচার পতনের দিনও রক্তে রঞ্জিত হয় পুরান ঢাকার গলিপথ
১৯ জুলাই। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মোসলেহ উদ্দীন বলে যান ফিরে এসে ছেলের সঙ্গে বসে দুপুরের খাবার খাবেন। এখনও সে অপেক্ষায় যেন শিশুটি। কিন্তু ১০ বছরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন আফনান জানে না ঘাতকের গুলি তার বাবার ঘরে ফেরার সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।
আফনানের মা বলেন, ‘ঘটনার দিন ফোন দিতেছি ধরে না। একবার বারান্দায় যাই, আরেকবার ঘরে আসি। বিকেল ৪টার দিকে ফোন পাই একটা। ছুটে গিয়ে দেখি আমার স্বামীর লাশ।’
এলাকায় বাবুর্চির কাজ করতেন রেজাউল করিম। ছেলেকে আন্দোলন থেকে ফেরাতে সেদিন বাসা থেকে বের হন তিনি। কিন্তু চারপাশে শত শত মানুষের মৃত্যু দেখে নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়েন বৈষম্য রোধের লড়াইয়ে।
রেজাউল বলেন, ‘শরীরে ১২-১৩টির মতো বুলেট বিদ্ধ হয়। মধুবাগের নতুন রাস্তার মোড়ে যখন যাই, সেখানে পুলিশের টিয়ারশেলে এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের ছোড়া একটা বুলেট আমার চোখে এসে লাগে।’
দৃষ্টি হারিয়ে কর্মহীন রেজাউলের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা আজও অনিশ্চিত। তবুও তার চোখের বিনিময়ে পাওয়া বৈষম্যহীন সমাজের সুফল যেন দেশের প্রতিটি মানুষ পায় -- এ আশা নিয়েই বেঁচে আছেন তিনি।
]]>