গ্রীষ্মের শুরুতেই ঝালকাঠিতে তীব্র পানি সংকট, ভোগান্তিতে পৌরবাসী

৩ সপ্তাহ আগে
গ্রীষ্মের শুরুতেই ভয়াবহ পানি সংকটে পড়েছে ঝালকাঠি পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ সংকট নতুন কিছু নয়, তবে চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে তা রীতিমতো তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন কয়েক হাজার পরিবার। ভোর হতেই কলসি ও ঘটিবাটি হাতে পানি সংগ্রহে নামতে হচ্ছে নারী-পুরুষসহ শিশুদের।

পৌর এলাকার কাঠপট্টি, কলাবাগান, কৃষ্ণকাঠি, গুরুধাম ও লঞ্চঘাট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ লাইনে পানি সংগ্রহে অপেক্ষার দৃশ্য। অধিকাংশ এলাকায় দিনের বড় একটি সময়েই নেই কোনো পানি সরবরাহ। কিছু এলাকায় রাতের বেলায় কিছুটা পানি সরবরাহ পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।


কৃষ্ণকাঠি এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক রনি জানান, আমাদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বাস করে। অথচ পানির জন্য সবাইকে যেন প্রতিদিন যুদ্ধ করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও এক ফোঁটা পানিও পাওয়া যায় না। এই দুর্ভোগ আর কতদিন চলবে জানি না।


এলাকার এক গৃহবধূ রহিমা বেগম বলেন, আমরা নিয়মিত পানির বিল পরিশোধ করি, পৌরসভার ট্যাক্সও দিই। তারপরও ন্যূনতম প্রয়োজনীয় পানিটুকুও পাচ্ছি না। প্রতিদিন সকালে উঠে ভাবি, আজ পানি পাব কি না! রান্না, গোসল, কাপড় ধোয়া সব কিছুতেই বিপদে পড়ছি।


পানি সংকটের কারণ হিসেবে পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুরনো ও নাজুক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, নষ্ট হয়ে যাওয়া পাম্প এবং কিছু এলাকাজুড়ে অপর্যাপ্ত লাইনের কারণেই এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।


আরও পড়ুন: পানি সংকটে নাকাল পিরোজপুর পৌরবাসী


ঝালকাঠি পৌরসভার পানি সরবরাহ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী বলেন, পুরোনো ও সনাতন পদ্ধতিতে পরিচালিত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা দিয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুতই পুরো ব্যবস্থা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমস্যা সমাধানে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে পানি সংকট অনেকাংশেই নিরসন হবে।


তিনি আরও জানান, ঝালকাঠি পৌরসভায় বর্তমানে ৮ হাজার ৫০০ পানির গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার গ্রাহক চরম সংকটে রয়েছেন। তবে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করে সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহের চেষ্টা চলছে।

 

যদিও কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে, তবুও বারবার প্রতিশ্রুতি পেলেও বাস্তব সমাধান না পাওয়ায় ভুক্তভোগীরা এখন অনেকটাই হতাশ ও ক্ষুব্ধ।


লঞ্চঘাট এলাকার এক প্রবীণ নাগরিক হারুন অর রশিদ বলেন, এ শহরে আমি ৪০ বছর ধরে থাকছি। আগে এমনটা কখনো হয়নি। এখন নিয়মিত বিল দিয়েও সেবা পাচ্ছি না। প্রশাসনের টেবিলে তো সব ঠিক, কিন্তু মাঠে নেমে বাস্তবতা দেখলেই বোঝা যাবে কতটা দুরবস্থায় আছি আমরা।


কলাবাগান এলাকার কলেজছাত্রী মীম আক্তার বলেন, সকালে গোসল করার পানি পর্যন্ত পাই না। ক্লাসে যেতেও অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। রাত ২-৩টার সময় উঠে যদি একটু পানি আসে, তখন সেটাই ধরে রাখতে হয়।


স্থানীয় হোটেল, চায়ের দোকান এমনকি ক্লিনিকেও দেখা দিয়েছে পানি সংকট। অনেকেই বিকল্প হিসেবে বৃষ্টি বা নলকূপের পানি ব্যবহারের চেষ্টা করলেও সেগুলোরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।


আরও পড়ুন: উপকূলবাসীর সুপেয় পানি সংকটের টেকসই সমাধান কবে?


প্রযুক্তি ও নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে অন্যান্য শহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চলায় ঝালকাঠি পৌরসভায় জনসংখ্যা বাড়লেও পানির সরবরাহ ব্যবস্থা রয়ে গেছে সেই পুরনো কাঠামোর মধ্যেই। এতে করে প্রতিদিন ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ মানুষের।


স্থানীয় এক ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, আধুনিক শহরের স্বপ্ন দেখাচ্ছে পৌরসভা, অথচ সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস পানিই ঠিকমতো দিতে পারছে না। আগে সমস্যা ছিল মাঝেমধ্যে, এখন তা নিয়মে পরিণত হয়েছে।


স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বাজেট ঘাটতি ও প্রকল্প অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে কাজ শুরু করতে সময় লাগছে। তবে ভুক্তভোগীদের দাবি, যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে দ্রুত সমাধান সম্ভব।


শামীম আহমেদ নামে এক সামাজিক সংগঠক বলেন, একটি শহরে পানি সরবরাহ মৌলিক সেবা। সেখানে এই ধরনের দুরবস্থা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে সংকট লাঘব করতে হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন