গাজায় মোতায়েনের পরিকল্পনা: আন্তর্জাতিক শান্তি বাহিনী আসলে কী?

৬ দিন আগে
হাজার হাজার মানুষকে হত্যার পর, উপত্যকার প্রায় সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে সম্প্রতি গাজায় কার্যকর হয় যুদ্ধবিরতি। সেই যুদ্ধবিরতিও গাজাবাসীর দুর্দশা কমাতে পারেনি, অব্যাহত আছে হত্যাযজ্ঞ। তবে এর মধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রে এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের এক পরিকল্পনা। যার অংশ হিসেবে বলা হচ্ছে গাজায় ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স’ (আইএসএফ) নামে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের কথা। কিন্তু, কী এই আইএসএফ?

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব করেছিলেন ট্রাম্প। গেল সোমবার সেই প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে। মূলত আইএসএফ মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে এই প্রস্তাবেই।

 

তত্ত্বগতভাবে, এই বাহিনী গাজা উপত্যকাকে ‘নিরস্ত্রীকরণ’ করার জন্য ইসরাইল ও মিশরের সাথে কাজ করবে এবং একটি ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে বলে জানা গেছে।

 

ট্রাম্পের পরিকল্পনা ‘পক্ষগুলো মেনে নিয়েছে বলে স্বীকার করে’ একটি প্রস্তাব পাস হওয়া সত্ত্বেও, গাজায় অব্যাহত রয়েছে ইসরাইলি বিমান হামলা। 

 

আইএসএফ কী? 

 

আইএসএফকে একটি বহুজাতিক বাহিনী হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে, যা গাজায় পুলিশকে প্রশিক্ষণ, সীমান্ত সুরক্ষিত, গাজাকে সামরিকীকরণে সহায়তা করে নিরাপত্তা বজায় রাখা, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোতায়েন করা হবে।

 

মূলত, এই বাহিনী গত ১৯ বছর ধরে হামাস পরিচালিত অনেক নিরাপত্তা দায়িত্ব গ্রহণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

 

আরও পড়ুন: গাজা থেকে পাচার করা হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের, নেপথ্যে কারা

 

২০০৬ সাল থেকে, হামাস গাজা উপত্যকা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে, যার মধ্যে আছে এর সামাজিক ও নিরাপত্তা পরিষেবা পরিচালনা।

 

বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি দলগুলোর কোনো মতামত ছাড়াই প্রণয়ন করা হয়েছে।

 

কারা থাকবে এই বাহিনীতে?

 

বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রস্তাবের অধীনে, এই বাহিনী ইসরাইল ও মিশরের সাথে কাজ করবে এবং একটি নতুন প্রশিক্ষিত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী থাকবে, যারা হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকবে না।

 

ট্রাম্পের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা বলেছেন, আজারবাইজান এবং ইন্দোনেশিয়া আইএসএফে সেনা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। 

 

তিনি আরও জানান, মিশর, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এতে অবদান রাখার বিষয়ে আলোচনা করছে। যদিও আমিরাতের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আনোয়ার গারগাশ বলেছেন, তার দেশ এতে অংশ নেবে না। মিশর এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

 

অক্টোবরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছিলেন, তার দেশ গাজাকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। 

 

আরও পড়ুন: গাজায় ইসরাইলের ভয়াবহ বিমান হামলা, নিহত ২৮

 

কিন্তু তুরস্ক ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায়, তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে গাজায় তাদের সেনা মোতায়েন করতে রাজি হবে না ইসরাইল। 

 

ভোট কেমন হলো?

 

প্রস্তাবটি ১৩-০ ভোটে পাস হয়। কিন্তু ভোটদানে বিরত ছিল রাশিয়া ও চীন। বাহিনীতে ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণের অভাব এবং গাজার ভবিষ্যতে জাতিসংঘের স্পষ্ট ভূমিকার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশ দু’টি।

 

রাশিয়া এর আগে ‘মার্কিন খসড়া থেকে অনুপ্রাণিত’ নিজস্ব প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল।

 

গাজার জন্য আন্তর্জাতিক শান্তি বাহিনীতে অংশগ্রহণের সম্ভাব্য সব বিকল্প খোঁজার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে এতে সম্পৃক্ত করারও অনুরোধ জানিয়েছে মস্কো।

 

তবে এতে ট্রাম্পের তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর কথা উল্লেখ করা হয়নি, যা গাজায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন হিসেবে কাজ করবে।

 

আরও পড়ুন: আল জাজিরার ক্যামেরাম্যানের ২ পায়ে গুলি করল ইসরাইলি সেনারা!

 

হামাস কী বলছে?

 

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা টেলিগ্রামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, এই ভোট ‘গাজা উপত্যকার ওপর একটি আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে’।

 

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজায় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না, তাদের নিরস্ত্র করা হবে এবং তাদের সদস্যদের দুটি বিকল্প দেয়া হবে: হয় সহাবস্থানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া অথবা গাজা থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়া।

 

কিন্তু হামাস বারবার বলেছে যে, তারা দায়িত্ব ছাড়লেও অস্ত্র ছাড়তে রাজি নয়।

 

আর এরমধ্যেই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সম্প্রতি ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটে বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষ হয়নি’ এবং হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে। 

 

আরও পড়ুন: যুদ্ধে চড়া মূল্য দিচ্ছে শিশুরা: সেভ দ্য চিলড্রেন

 

সূত্র: আল জাজিরা

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন