ভোলার লালমোহনের মাদ্রাসা ছাত্র মো. আরিফ পড়াশোনার পাশাপাশি অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ও টানাপড়েনের সংসারে পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন। গত ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকার সংঘর্ষের সময় তার ডান চোখের নিচ দিয়ে গুলি ঢুকে মাথার পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়।
আরিফের বাবা বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের আশা ভরসা কিছু নেই। আমার আশা ছিল ছেলে আরিফকে ঘিরে। এখন আমরা মেয়েগুলো নিয়ে কি করবো জানি না। ওদের লেখাপড়াই বা কিভাবে করাবো সেটাও জানি না।’
আন্দোলনে নিহত আরিফের বোনেরা জানায়, এখনো তাদের দুই বোন পড়াশোনা করছে। তাদের পড়াশোনা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এবার একজন এইচএসসি পরীক্ষা দিবে। সরকার যদি পারে, তাকে একটি চাকরি দিলে পরিবারটা কোনোমতে চলে যেতো।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হাছানের স্ত্রী মালা বেগম হারান পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে। দেশের জন্য লড়াইয়ে নামা স্বামীকে হারিয়ে এখন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
মালা বেগম বলেন, ‘সব দায়িত্ব ওর বাবা নিতো। এখন আমার সন্তানের বাবা নেই। দেখারও কেউ নেই।’
নিহত হাছানের মা বলেন, ‘সরকার যদি আমার ছেলের বৌকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতো, তাহলে আমার নাতি-নাতনিদের নিয়ে খেয়ে পরে বাঁচতে পারতো। তার সন্তানগুলোকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করতে পারতো।’
আরও পড়ুন: পৃথিবীর মুখ দেখলো জুলাই আন্দোলনে নিহত শাজাহানের সন্তান
নিহত হাছানের বাবা বলেন, ‘ছেলের চিকিৎসা করাতে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা চলে গেছে। ধারদেনা করে চিকিৎসা করেছি। এখন সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
এদিকে, অর্থসংকটের কারণে থেমে আছে গুলিবিদ্ধ অনার্সের ছাত্র সৌরভ সাহার চিকিৎসা। সকল শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের উন্নত চিকিৎসাসহ দায়ীদের বিচার নিশ্চিতের দাবি হতাহত পরিবার ও আন্দোলনকারী ছাত্র সমন্বয়কদের। পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
আহত সৌরভ সাহা বলেন, ‘আমি ডাক্তারি পড়তে চেয়েছিলাম। এখন গুলিবিদ্ধ হয়ে বিছানায় পড়ে আছি।’
সৌরভ সাহার মা জানান, তাদের যা সম্বল ছিল, সেটা আমরা করেছি। কিন্তু এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। চিকিৎসাবাবদ এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অনুদান পাননি তারা।
জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ‘যেকোনো সমস্যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ামাত্রই আমরা সেটা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’
জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে দ্বীপজেলা ভোলার হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা সহায়তা কামনা করেছেন।