গণ-অভ্যুত্থান: সহযোদ্ধার রক্তে ভেজা চশমাটি এখনও আছে কামরুলের কাছে

১ সপ্তাহে আগে
জুলাইজুড়ে স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে মিরপুরে শক্ত অবস্থানে ছিল ছাত্র-জনতা। বারবারই ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনগুলো পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা দখলের চেষ্টা করলেও রুখে দেন স্থানীয়রা। শাসকগোষ্ঠী পিছু হটলেও দিতে হয় চরম মূল্য। লাশের সারি হয় দীর্ঘ, হাসপাতালে বাড়তে থাকে আহতদের আর্তনাদ।

রাজধানীর মিরপুরে মূল-সড়ক থেকে শুরু করে সরু গলি- প্রায় সবখানেই পুলিশের মুহুর্মুহু গুলির সামনে বুক পেতে নিজেকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সঁপে দিয়েছিল ছাত্র-জনতা। সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি ব্যবসায়ী কামরুল হাসান। সহযোদ্ধা মাসুদের রক্তে ভেজা চশমাটি এখনও আছে তার কাছে। যা ক্ষণে ক্ষণে মনে করিয়ে দেয় স্বৈরাচারীর বর্বরতাকে।

 

ব্যবসায়ী কামরুল বলেন, ‘আমার চোখের সামনে তিন-চারটা লাশ পড়ে যায়। এক জায়গায় মাসুদ ভাই আমি আর ওসমান মিলে তিনজন ছিলাম। হঠাৎ করে মাসুদ ভাই রাস্তার ওপরে শুয়ে গেছেন। এক পর্যায়ে দেখলাম ওনার মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাকে আলোক হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

 

মিরপুর ১০ নম্বরে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলি লাগে মাসুদের মাথায়। এরপর হাসপাতালে নিলেও শেষরক্ষা হয়নি। সাড়ে তিন বছরে মেয়ে আরাবী খুঁজে বেড়ায় তার বাবাকে।

 

মাসুদের স্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতালে আমি আর বাবু সমস্ত শরীরে হাত বুলিয়ে দিয়েছি, ওর সঙ্গে কথা বলেছি। তখনও মনে হয়নি এমন কিছু হবে। একটা কথাই মনে হচ্ছিল ওর কিচ্ছু হবে না, খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।‘

 

আরও পড়ুন: চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের মোড় ঘুরিয়ে দেন রামপুরার ছাত্র-জনতা

 

সেই আন্দোলনে আহত অনেকে এখনও হাসপাতালে লড়াই করছেন যন্ত্রণার সঙ্গে। ১৮ জুলাই আহত হওয়ার পর হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকলেও এই যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে হয়েছে গায়েবী মামলা।

 

চা বিক্রেতা বাবার সঙ্গে রাব্বীর দেখা হয় ৫ আগস্ট সন্ধ্যায়। ঘণ্টাখানেক পর খবর আসে, গুলির আঘাতে নিহত হয়েছেন ১২ বছর বয়সী এই মাদ্রাসাছাত্র। এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে করতে হয় দ্রুত দাফন।

 

রাব্বীর বাবা বলেন, আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্রুত দাফনের জন্য চাপ দেয়। উপায় না পেয়ে দ্রুত জানাজা পড়েই দাফন করা হয় আমার ছেলে। আমার পোলাটারে বার বার মনে পড়ে।’

 

মাত্র আঠারো দিনের ব্যবধানে এক পরিবার থেকে হারিয়ে গেছে দুই সদস্য। আকরাম খান রাব্বী এবং মেহেরুন নেছা তানহা। পরিবার এখনও শোকস্তব্ধ।

 

আহত কিংবা নিহত পরিবারের আর্তনাদে এখন একটাই দাবি, ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন