খুলনার পিটিআই মোড়ের চারপাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার এবং ক্লিনিকের ভিড়ের মধ্যে সড়ক সংস্কারের কাজ চলার কারণে একপাশ বন্ধ থাকায়, সরু রাস্তায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘসময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে একের পর এক গাড়ি চলতে থাকে। একই অবস্থা গল্লামারি সেতু এলাকাতেও। বছরের পর বছর ধরে নির্মাণকাজ চললেও সেতুটি এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। একমুখী চলাচল এবং অনিয়ন্ত্রিত টার্নিংয়ে যানজট আরও বেড়েছে।
এমন চিত্র শুধু একটি বা দুটি স্থানে নয়, সোনাডাঙ্গা, শিববাড়ী, ডাকবাংলা মোড়, দৌলতপুরসহ অন্তত এক ডজন এলাকাতেই একই দুরবস্থা।
অপরদিকে, নগরীর অধিকাংশ ফুটপাত এখন দোকান, অস্থায়ী বসতি, গাড়ি পার্কিং এবং নির্মাণসামগ্রীর দখলে। এসব কারণে পথচারীরা সড়কের মাঝখান দিয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছেন, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। একদিকে যেখানে সড়ক সংকট, অন্যদিকে ফুটপাতের অব্যবস্থাপনা নগরবাসীকে যন্ত্রণায় ফেলে রেখেছে।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী নাজমা আক্তার বলেন, 'প্রতিদিন ক্লাসে যেতে দেরি হয়ে যায়। পিটিআই মোড় থেকে শিববাড়ী পর্যন্ত আসতে আধাঘণ্টা লেগে যায়, যেখানে সময় লাগার কথা মাত্র পাঁচ মিনিট।'
ইজিবাইক চালক আব্দুল জলিল বলেন, 'যানজটের কারণে এক ঘণ্টায় তিনটা ট্রিপও দিতে পারি না। দিনে যা কামাই করি, তাতে ভাড়াই ওঠে না।'
ট্রাকচালক মো. রফিক বলেন, 'রাতেও জ্যাম লেগে থাকে। মালামাল নামাতে বা তুলতে দেরি হলে, গন্তব্যে পৌঁছাতে পুরো দিন চলে যায়।'
খুলনার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চরম দুরবস্থায়। ১৫ বছর আগে স্থাপিত সিগন্যাল লাইটগুলো গত পাঁচ বছর ধরে অকেজো। ফলে ম্যানুয়ালি যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।
আরও পড়ুন: খুলনা-মোংলা রেলপথ: নেই পণ্যবাহী ট্রেন, থেমে আছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা
দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল ইমরান হোসেন বলেন, 'সিগন্যাল লাইট না থাকায় আমাদের হাতের ইশারাতেই যান নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। অনেকে নির্দেশ না মেনে চলে, এতে জ্যাম আরও বেড়ে যায়।'
কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম বলেন, 'দীর্ঘ সময় রোদে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। লোকবল কম, তাই ব্যস্ত সময়গুলোতে পুরো মোড় সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে।'
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. ছয়রুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'যানজট নিরসনে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি চলছে। তবে লোকবল সংকটের কারণে সব এলাকাতে একসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হচ্ছে না।'
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, খুলনার মতো ছোট শহরে সড়ক সংকটের মূল কারণ পরিকল্পনার অভাব। সড়ক উন্নয়ন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পার্কিং জোন ও গণপরিবহন; সবকিছু নিয়ে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ না করলে এই দুরবস্থা কাটবে না। খুলনার সড়ক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে সিটি কর্পোরেশন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ট্রাফিক বিভাগ এবং সড়ক বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।
আরও পড়ুন: বিলুপ্তির পথে খুলনার প্রথম পাকা দালান ‘চার্লির কুঠিবাড়ি’
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার বলেন, 'নগর উন্নয়নের নানা প্রকল্প হলেও সমন্বয়ের অভাবে একটির কাজ অন্যটির ক্ষতি করছে। রাস্তা সংস্কার, ড্রেন নির্মাণ, গ্যাস বা পানি লাইনের কাজ; সব একসঙ্গে হলে জ্যাম আরও বেড়ে যায়। অব্যবস্থাপনা দূর করে টেকসই নগর পরিবহন ব্যবস্থা গড়তে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান প্রয়োজন।'
ট্রাফিক বিভাগের তথ্যমতে, খুলনা মহানগরীতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক লাখ যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে যান্ত্রিক এবং অযান্ত্রিক যানবাহনের সংখ্যা যোগফলে একটি বিপুল সংখ্যক গাড়ির চলাচল শহরের সড়কগুলোতে যানজট সৃষ্টি করছে।

৩ সপ্তাহ আগে
৪







Bengali (BD) ·
English (US) ·