খুলনায় প্রতিদিন সড়কে ঝরে ২ প্রাণ!

৪ সপ্তাহ আগে
খুলনা বিভাগের সড়ক এখন যেন মৃত্যুফাঁদের প্রতীক। প্রতিদিন গড়ে দুজন মানুষ সড়কে প্রাণ হারাচ্ছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন ভয়াবহ চিত্র।

সংস্থাটির খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৬১৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬১৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৬১৪ জন।

 

বুধবার (২২ অক্টোবর) খুলনা জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনায় এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়।

 

যশোরে সর্বাধিক দুর্ঘটনা

 

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, একই সময়ে ৮৯২টি যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ২৫৪টি। বিভাগীয় পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যশোর জেলায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি সবচেয়ে বেশি। সেখানে ১০৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০৭ জন এবং আহত ১০৪ জন।

 

কুষ্টিয়ায় ১০৩টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১০০ জন, আহত ১০৪ জন। ঝিনাইদহে ৮৪টি দুর্ঘটনায় নিহত ৮৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৮৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ৬০ জন, মেহেরপুরে ৪৭টি দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭ জন। খুলনা জেলায় ৩৪টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৪৩ জনের, আহত ৩৮ জন। বাগেরহাটে ৪৮টি দুর্ঘটনায় নিহত ৪৫ জন, সাতক্ষীরায় ৩৯টি দুর্ঘটনায় ৫০ জন এবং নড়াইলে ২৫টি দুর্ঘটনায় নিহত ৩০ জন।

 

র‍্যালি ও আলোচনা সভা

 

নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে বুধবার খুলনায় জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএর আয়োজনে র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে শহীদ হাদিস পার্ক থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনায় খুলনা বিভাগের দুর্ঘটনার এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে বিআরটিএর পক্ষ থেকে তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

 

সভায় জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. হুসাইন শওকত। সভায় সড়ক বিভাগ, নিরাপদ সড়ক চাই, বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

 

আরও পড়ুন: আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কাজ, ১১ তরুণ-তরুণী আটক

 

দুর্ঘটনার কারণ ও করণীয়

 

বক্তারা বলেন, সড়কে প্রাণহানির পেছনে রয়েছে চালকদের অদক্ষতা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, সড়কের বেহাল অবস্থা এবং আইন প্রয়োগের ঘাটতি। তারা বলেন, সড়কে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের পাশাপাশি চালক ও পথচারী উভয়কেই সচেতন হতে হবে।

 

বিআরটিএ ও সড়ক সংশ্লিষ্টদের মতে, দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো আইন প্রয়োগের দুর্বলতা, চালকদের প্রশিক্ষণ ঘাটতি, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহনের চলাচল এবং প্রতিযোগিতামূলক গতি নিয়ন্ত্রণহীনতা।

 

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন,

 

প্রতিদিনই সড়কে ঝরছে প্রাণ। বেপরোয়া গতি, সড়কে অব্যবস্থাপনা ও নজরদারির অভাব এ মৃত্যুমিছিলের মূল কারণ। প্রকৌশলগত ত্রুটি দূর করে সড়কে সঠিক নিয়ম প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে নিরাপদ সড়ক কেবল দিবসেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

 

তিনি আরও বলেন, খুলনার ডুমুরিয়া, যশোর-কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের সড়কগুলোতে বাঁক বেশি থাকায় দুর্ঘটনার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি।

 

বক্তারা মত দেন, শুধু আইন বা শাস্তি দিয়ে দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব নয়, প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। চালক, যাত্রী ও পথচারী সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার, অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণ এবং ক্লান্ত অবস্থায় গাড়ি না চালানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

 

সভা শেষে সবাই নিরাপদ সড়ক গড়ার প্রত্যয়ে শপথ নেন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন