কিশোরগঞ্জে প্রভাবশালীদের বাধায় বন্ধ সড়কের নির্মাণ কাজ

২ সপ্তাহ আগে
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে প্রভাবশালীদের বাধার কারণে এক বছর ধরে আটকে আছে একটি সড়ক নির্মাণের কাজ। বারবার বাধার কারণে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

গত দু’মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাইছমা গ্রামের সড়ক নির্মাণের কাজ। এ অবস্থায় বৃষ্টিবাদলের দিনে এলাকার প্রায় হাজারখানেক পরিবার মহাদুর্ভোগে পড়েছে। বাড়িঘরে যেতে দীর্ঘপথ ঘুরতে হচ্ছে তাদের। রিকশা বা ইজিবাইক দিয়ে ধানসহ কৃষিপণ্য বাজারে নিতে পারছে না। রোগীদের কাঁধে বা কোলে করে মূল রাস্তায় নিয়ে যেতে হচ্ছে।


অবিলম্বে সড়কের নির্মাণ কাজ অবিলম্বে শেষ করার দাবিতে রোববার (৪ মে) বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। এতে পাঁচ শতাধিক গ্রামবাসী অংশ নেয়। তারা দ্রুত রাস্তাটি করে মানুষের কষ্ট লাঘবের দাবি জানিয়েছে।


হোসেনপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে ওই গ্রামে ৩২০মিটার দীর্ঘ নতুন একটি রাস্তার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে রাস্তার কাজ শুরু হয়। এ বছরের এপ্রিলে কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ঠিকাদার কিছু মাটি খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়া কিছুই করতে পারেনি। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। বাধার কারণে গত দু’মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুন: নওগাঁয় নিম্নমানের ইট-রাবিশ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ

এলাকার লোকজন জানিয়েছে, রাস্তার জায়গাতে কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিও রয়েছে। তারা প্রথমে রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি ছিল। পরে অদৃশ্য কারণে বেঁকে বসে। রাস্তার কাজ শুরু হলেও তাদের বাধার কারণে আর শেষ করা যাচ্ছে না।


হোসেনপুর পৌরসভার ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মানসুরা বেগম বলেন, তিনি অনেক দৌঁড়ঝাঁপ করে প্রকল্পটি এনেছিলেন। কিন্তু এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল এখন আর রাস্তার জন্য জায়গা দিচ্ছে না। ফলে কাজটি বন্ধ হয়ে গেছে। মাত্র ৩২০ মিটার রাস্তার কারণে আশপাশের হাজারেরও বেশি পরিবার কষ্ট করছে। আমরা চাই প্রশাসন রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণ করে দিক। এ সড়কসহ পুরো প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিম ডেভলাপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। 


এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক  মো. ফজলুর রহমান তারেক জানান, রাস্তাটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ লাখ ৫০ হাজার। কিন্তু বাধার কারণে কাজটি কিছুতেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এরইমধ্যে নির্মাণকাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো না হলে তারা কাজ শুরু করতে পারবে না।


সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার আব্দুস সাত্তার ও আব্দুল হাইসহ বেশ কয়েকজনের বাড়ির কিছু অংশ ও জায়গা রাস্তায় পড়েছে। তারা এখন নিজেদের ব্যক্তিগত জায়গা ছাড়তে রাজি হচ্ছে না। তারা নিজেদের বাড়িঘর ও ভূমি দেখিয়ে অন্য জায়গা দিয়ে রাস্তা করার কথা বলছেন।


আব্দুস সাত্তারের ছেলে মো. সাব্বির বলেন, ‘রাস্তা আমরাও চাই। তবে রাস্তার জন্য জায়গা আমরা একা দেব কেন? সবাই কিছু কিছু জয়গা দিক। প্রয়োজনে রাস্তার ড্রয়িং নতুন করে করা হোক।’ তবে তিনি রাস্তার কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।


আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁও / ঠিকাদার ইটভাটা মালিক: নিম্নমানের ইটে হচ্ছে সড়ক নির্মাণ, ক্ষোভ স্থানীয়দের
 

কাইছমা গ্রামের নাদিরা আক্তার, দুলাল মিয়া, আবু তাহের, বসির উদ্দিন বাচ্চুসহ অন্তত ২০ থেকে ২৫ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্প গ্রহণের আগে সবাই রাজি ছিল রাস্তা হোক। এখন সাত্তার, আব্দুল হাইসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী পরিবার কাজটি শুরুতেই আটকে দিয়েছে। তাদের কারণে কয়েক হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।


এ বিষয়ে হোসেনপুর পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফরিদ-আল-সোহান বলেন, ‘রাস্তার ব্যাপারে আমি বেশ কয়েকবার সেখানে গিয়েছি। কাজটি শুরুও হয়েছিল। তবে একটি পক্ষের বাধার কারণে কাজটি এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। এরইমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এর মেয়াদ বাড়বে। মেয়াদ বাড়ার পর সবপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে একটা সমঝোতা করব। আশা করি কাজ থেমে থাকবে না, অবশ্যই শেষ হবে। লোকজনও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন