COP কী, কেন হয়?
COP এর পূর্ণ রূপ হলো Conference of the Parties। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (UNFCCC) আওতায় প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় যৌথ সিদ্ধান্ত নিতে এখানে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ একত্র হয়। এর মূল উদ্দেশ্য, গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো, অভিযোজন বাড়ানো এবং ন্যায্যভাবে জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করা।
কপ-এ ফাইন্যান্স বা অর্থায়ন বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী মূলত উন্নত দেশগুলো। আর ক্ষতিটা ভোগ করছে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো। তাই কপ-এ বড় আলোচনাই থাকে কে কত টাকা দেবে এবং সেই অর্থ কোথায় যাবে?
তবে বাংলাদেশের ভাষায় একটাই বার্তা- অর্থ সেখানেই যেতে হবে, যেখানে মানুষ ঘরবাড়ি, ফসল, সংস্কৃতি, এমনকি বেঁচে থাকার স্বপ্নও হারিয়ে ফেলেছে।
বাংলাদেশর সিভিল সোসাইটি এবং ৩৬টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার যৌথভাবে করা পজিশন পেপারে উঠে এসেছে- বাংলাদেশের অবস্থান ও দাবিগুলো-
জলবায়ু অর্থায়ন:
প্রতি বছর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার বাস্তবায়ন করতে হবে এবং আগের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। নতুন লক্ষ্য স্থির করতে হবে- ২০৩৫ সালের মধ্যে বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার। এই অর্থ ঋণ নয়, অনুদান হিসেবে দিতে হবে।
মোট অর্থের ৫০ শতাংশ অভিযোজনের (adaptation) জন্য এবং ২০ শতাংশ UNFCCC তহবিলের (GCF, LDCF) মাধ্যমে দিতে হবে। বাংলাদেশ চায়- ন্যায্যতা, সহযোগিতা, জবাবদিহিমূলক জলবায়ু কাঠামো।
ক্ষতির স্বীকৃতি ও প্রতিকার:
বাংলাদেশ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি ভবিষ্যতের নয়, বর্তমানের বাস্তবতা। এ ক্ষতি শুধু টাকায় মাপা যায় না; এতে আছে মানুষের মানসিক যন্ত্রণা, সংস্কৃতির ক্ষয়, আর হারিয়ে যাওয়া জীবনের স্মৃতি। তাই বাংলাদেশের দাবি- লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড দ্রুত চালু করতে হবে, অর্থ সরাসরি পৌঁছাতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে এবং তা হতে হবে অনুদান, ঋণ নয়।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের ছোবলে উপকূল, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জীবিকার সংকটে বাসিন্দারা
ন্যায্য রূপান্তর:
জীবাশ্ম জ্বালানির যুগ শেষ হবে, কিন্তু রূপান্তরটা হতে হবে ন্যায্যভাবে। বাংলাদেশের বড় অংশের বিদ্যুৎ এখনো তেল, কয়লা, এলএনজির ওপর নির্ভরশীল তবু আমাদের আছে নবায়নযোগ্য শক্তির বিপুল সম্ভাবনা। বাংলাদেশ চায়- এই রূপান্তরে কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে। চায় শ্রমিকদের পুনঃপ্রশিক্ষণ, নারীর অংশগ্রহণ আর তরুণদের জন্য সবুজ চাকরি সৃষ্টি করতে। এটাই হবে এক ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর (Just Transition)।
নারী ও তরুণদের ভূমিকা:
বাংলাদেশ বলছে, নারীরা শুধু ভুক্তভোগী নয়, তারাই সমাধানের চালিকাশক্তি। তরুণদের জন্য দরকার গ্রিন জবস্ বা সবুজ চাকরির তহবিল, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং নীতিনির্ধারণে প্রতিনিধিত্ব। কারণ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতেই টেকসই পৃথিবীর চাবিকাঠি।
পাশাপাশি বাংলাদেশ চায়, ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য অনুদান-ভিত্তিক অর্থায়ন ও প্রযুক্তি স্থানান্তর বাড়াতে হবে। জলবায়ু-সহনশীল কৃষি পদ্ধতি প্রচার করতে হবে।
আরও পড়ুন: উপকূলে গর্ভপাতের হার বেশি, কারণ কী?
একই বাস্তবতা এশিয়ার দেশগুলোতে:
এশিয়া মহাদেশ এখন জলবায়ুর সবচেয়ে বড় আঘাতের মুখে। চীন, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন সবারই অভিন্ন বাস্তবতা। কিন্তু পার্থক্য হলো- তাদের অর্থনীতি বড়, তাদের সক্ষমতা বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো টিকে আছে সহনশীলতা আর অভিযোজন ক্ষমতার জোরে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের উপকূল ডুবে যাচ্ছে। লবণাক্ততার কারণে ফসলের ক্ষতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এবং প্রতি বছর লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। এই বাস্তবতা শুধু বাংলাদেশের নয়। এশিয়া ও বিশ্বের প্রতিটি দুর্বল দেশের আর্তনাদ।
বৈশ্বিক অর্থনীতি ও ন্যায্য অর্থায়ন:
বাংলাদেশ বলছে, জলবায়ু তহবিলের অন্তত ৭০ শতাংশ হতে হবে অনুদান-ভিত্তিক, উন্নত দেশগুলোকে অবদান রাখতে বাধ্য বাধ্য-বাধকতার মধ্যে আনতে হবে। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করতে হবে; যাতে সহজ হয় দুর্বল দেশগুলোর প্রবেশাধিকার। পাশাপাশি প্রস্তাব এসেছে এক নতুন তহবিলের- যার নাম সলিডারিটি ফান্ড; যেখানে প্রকৃতি ও মানুষের অধিকার একসাথে স্বীকৃতি পাবে।
বাংলাদেশজুড়ে ২৬টি আঞ্চলিক সংলাপে সাধারণ মানুষ বলেছে- “আমাদের কথা শুনুন”। তাদের দাবি, ‘লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড বা তহবিল দ্রুত চালু হোক। অর্থ সরাসরি স্থানীয়দের হাতে পৌঁছাক। আমাদের অভিজ্ঞতাকে বৈশ্বিক আলোচনার অংশ করা হোক।’
বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা শুধু জলবায়ুর শিকার নই, আমরা সমাধানের অংশ। আমরা চাই এমন এক পৃথিবী, যেখানে থাকবে ন্যায়, দায়িত্ব আর থাকবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই আশা।

৩ সপ্তাহ আগে
৮







Bengali (BD) ·
English (US) ·