গত কমাস ধরে দেশে পেঁয়াজের বাজার বেশ গরম ছিল। দেশের বাজারে পণ্যটির দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত ৫ সেপ্টেম্বর আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতেও বাজার নিয়ন্ত্রণে না এলে গত ৬ নভেম্বর পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক-কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। এ সুবিধা ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এতে আমদানি বাড়ায় ও নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে উত্তাপ ছড়ানো পেঁয়াজের বাজারে। বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের কালি (কেজি ৩০-৪০ টাকা) উঠায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে পণ্যটির। পাশাপাশি বাজারে পুরোদমে উঠতে শুরু করেছে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজও।
আরও পড়ুন: আরও কমলো আলু-পেঁয়াজের দাম
বর্তমানে কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমে খুচরায় প্রতি কেজি পুরান দেশি পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকা, নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৫০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। আর পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ ৪২-৪৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম কমার তথ্য মিলেছে টিসিবির পরিসংখ্যানেও। তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৩৪.৬৯ শতাংশ ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২৭.০৩ শতাংশ কমেছে।
আড়তদার ও আমদানিকারকরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির বিকল্প নেই। আমদানি বাড়ায় দাম কমছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মিনহাজ বলেন, বর্তমানে আড়তে প্রতি কেজি দেশি নতুন পেঁয়াজ ৪২ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। মূলত ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বেড়েছে। এর প্রভাবই পড়ছে বাজারে।
আরেক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হাফিজ জানান, বাজারে পুরোদমে উঠে গেছে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ। আগামী ৩ মাস বাজারে এটি থাকবে। সরবরাহ ঠিক থাকলে দাম ৫০-৬০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করতে পারে।
এদিকে, স্বস্তি ফিরছে ভোক্তার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলা আলুর বাজারেও। তবে চলতি ডিসেম্বরের শুরুতেই অস্থির ছিল এ বাজার। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন খোদ বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেছিলেন, সামনে আর যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে কাজ চলছে।
তবে বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ ও আমদানি বৃদ্ধি এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বাজার অভিযানে পাল্টাতে শুরু করেছে পরিস্থিতি। এতে কমতে শুরু করে আলুর দাম। বিক্রেতারা বলছেন, নতুন আলুর দাম ১২০ টাকা থেকে কমে ৫০ টাকায় নেমেছে। এ ধরনের আলুর আধিক্যের কারণে পুরান আলুর দামও কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
আর পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি নতুন আলু ৪০-৪৪ টাকা ও পুরান আলু ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম কমার তথ্য মিলেছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পরিসংখ্যানেও। তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম ২১.৮৮ শতাংশ কমেছে।
আরও পড়ুন: আলু আমদানিতে শুল্ক কমলো, পেঁয়াজে প্রত্যাহার
কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের রুবেল জানান, বাজারে পুরোদমে উঠে গেছে নতুন আলু। পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানিও অব্যাহত রয়েছে। এতে নতুন ও পুরান -- দুই ধরনের আলুর দাম কমতে শুরু করেছে।
এর আগে, সরবরাহ বাড়াতে ও দাম নিয়ন্ত্রণে গত ৫ সেপ্টেম্বর আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তাও সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আলু ও পেঁয়াজের দাম কমায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তারা বলেন, আমদানি বাড়ালে ও নিয়মিত বাজার মনিটরিং করলে দাম কমবে। এতে স্বস্তি পাবে সাধারণ ভোক্তা।
]]>