রোববার (২৩ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘মিডিয়া ইন দ্য এজ অব মিসইনফরমেশন অ্যান্ড ডিসইনফরমেশন : চ্যালেঞ্জেস, রেসপনসিবিলিটিজ অ্যান্ড দ্য পাথ ফরোয়ার্ড ফর ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সভায় তিনি এসব কথা বলেন তিনি।
কামাল আহমেদ বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব তার তালিকা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সে অনুযায়ী সোমবারের মধ্যেই আশু বাস্তবায়ন করা যাবে এমন কিছু সুপারিশের তালিকা তার কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টা অঙ্গীকার করেছেন যে তিনি সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন।
কামাল আহমেদ বলেন,
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অপতথ্য বা অপপ্রচার একেবারে নতুন বিষয় নয় এগুলো নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগুলো মোকাবিলা করার জন্য যে কাজ হচ্ছে সেটি খুবই সীমিত। ব্যক্তিগতভাবে আমি গণমাধ্যমগুলোতে ফ্যাক্ট চেকিং ডেস্ক চালুর জন্য অনেক আগেই বলা শুরু করেছি। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে মিডিয়া হাউজগুলোতে এক ধরনের আশঙ্কা রয়েছে। অনেকেই মনে করে যে ফ্যাক্ট চেক করলে ক্ষমতায় যারা (সরকারের) আছেন তাদের বিরাগভাজন হতে হয়। এরকম পটভূমিতে বেসরকারি উদ্যোগেই দেশে ফ্যাক্ট চেকিং শুরু হয়েছে। কিন্তু এগুলোর কাজ সীমাবদ্ধ। এত ব্যাপক আকারে অপতথ্যের সুনামি ছড়িয়ে পড়েছে, যা মোকাবিলার জন্য সীমিত পর্যায়ের ওই উদ্যোগে খুব একটা কাজ হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুরু থেকেই মনে করেছি যে মিস ইনফরমেশন শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতেই ছড়ানো হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অনেক সময় মূলধারার গণমাধ্যমেও ভাইরালের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্রকাশিত হয়েছে এমন অপতথ্যও তাদের মাধ্যমে প্রচার করছে ফলে এটি আরও ছড়িয়ে পড়ছে। সেজন্য আমরা সুপারিশে বলেছি প্রতিটি মিডিয়া হাউসে ফ্যাক্ট চেকিং ডেস্ক থাকতে হবে। কিংবা সবগুলো গণমাধ্যমও যদি সম্মিলিতভাবে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে তার ফলাফল আরও ভালো পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: ‘বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ঘিরে অনেক নেতিবাচকতা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, অনেকেই বলছেন এই প্রেস কমিশনের রিপোর্ট সংবাদ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়ার জন্য। কারণ যে বেতন স্কেল তারা প্রস্তাবনা করেছেন সেটি মানার মতো আর্থিক সক্ষমতা সংবাদপত্রের নেই। সেটি মানতে গেলে অসংখ্য সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাবে। এ বক্তব্যটি পুরোপুরি গার্মেন্টস মালিকদের বক্তব্যের মতোই। তারা বলেন যে, আমি শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি দিলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। আপনি যদি ন্যায্য মজুরি দিতে না পারেন, তাহলে প্রতিষ্ঠান করবেন কেন। আমরা সংবাদপত্রের থেকে কর্পোরেট ট্যাক্স তুলে দিতে বলেছি। যাতে সংবাদপত্রগুলো আর্থিকভাবে সামর্থ্য ফিরে পায়। শুধু সাংবাদিকদের বেতনের কথা বলা হয়েছে সেজন্য সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাবে এটিও এক ধরনের মিস ইনফরমেশন। আমাদেরকে সব ক্ষেত্রেই খণ্ডিত তথ্য ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
একইসঙ্গে শিরোনামে যেন খণ্ডিত তথ্য ব্যবহার করা না হয় এবং তথ্য যাচাই না করে কোনো তথ্য প্রচার করা না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
এসময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অশীষ দামলে উপস্থিত ছিলেন।
]]>