এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজন সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা: ধর্ম উপদেষ্টা

১ সপ্তাহে আগে
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, সংস্কার শেষ হলে আমরা একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবো। এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজন ঐক্য, আমাদের সবার উচিত ঐক্যবদ্ধ থাকা।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের মিলনায়তনে আয়োজিত ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণরত ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।


ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের স্ব স্ব ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। যারা এ অধিকার ক্ষুণ্ন করতে চায়, তাদের আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব সরকারের।’


উপদেষ্টা খালিদ হোসেন বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। ইসলামি ফাউন্ডেশন ছিল দুর্নীতির আখড়া, আমরা তা ঢেলে সাজিয়েছি। একটা বৈষম্যহীন সমাজ রাষ্ট্র উপহার দিতে চাই। আগামী দিনে যারা আসবেন তাদের জন্য পদ শুভ করতে চাই।’


ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকারি খরচে আমরা কাউকে বা কোনো অতিথিকে বিনা পয়সায় হজ করাবো না। একমাত্র হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা যুক্ত, তারাই হজে যাবেন। কোনো এজেন্সি যদি এই হাজির সঙ্গে প্রতারণা করে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। আমরা হজ ব্যবস্থাপনাকে সুন্দর করতে চাচ্ছি। একটি সমাজ গঠনে ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতিবগণ যথাযথ ভূমিকা পালন করেন, তারা ভালো না থাকলে সমাজ ভালো থাকবে না। তাই তাদের বেতন কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। ইমামদের দুটি উৎসব বোনাস প্রদানে ধর্ম মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ ছাড়া মসজিদের জন্যও নীতিমালা করা হচ্ছে।’


আরও পড়ুন: সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ধর্মীয় উগ্রবাদে নয়, রাজনৈতিক কারণে: ধর্ম উপদেষ্টা


এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘ইমামদের স্বাবলম্বী করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করার কাজ চলমান রয়েছে। যে সব ইমাম মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন অথবা নিচ্ছেন তারা ইমামতির পাশাপাশি যাতে ছোট ব্যবসা (কুটির শিল্প, মৎস্য চাষ, খেত-খামার, কবুতর পালন অথবা কোয়েল পাখি পালন) করে স্বাবলম্বী হতে পারেন, এজন্য বিনা সুদে আমরা তাদের ঋণ দিচ্ছি। অর্থাৎ আপনি সামান্য পুঁজি নেবেন, আমরা সামান্য পুঁজি দেবো ইমামতির পাশাপাশি ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হবেন, এতে লজ্জার কিছু নেই। পেটের ভাত জোগাড় করা ইবাদত, সমস্ত নবীরা নিজ হাতে কাজ করেছেন। আমি ইমাম হয়েছি বলে একটু কৃষি কাজ কি করতে পারবো না?’

 

তিনি বলেন, ‘যে সব ইমাম ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস অথবা ডায়ালাইসিস করছেন, চলন শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন তাদের আমরা এককালীন অনুদান দেব, ফেরত দিতে হবে না। এ ছাড়া ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে ভালো অ্যামাউন্ট আছে। আমরা চাচ্ছি ব্যাংকে পড়ে থাকা টাকাগুলোকে ইউটিলাইজ করে ইমাম মুয়াজ্জিনদের কল্যাণে কাজে লাগাতে।’

 

ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটা ওয়ার্টার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করবো, সেখান থেকে মিনারেল ওয়াটার তৈরি করে বাজারে সাপ্লাই দেবো, যা লাভ হবো সেটা ইমাম মুয়াজ্জিনদের কল্যাণ ট্রাস্টে যাবে। আমাদের সময় কম হলেও আমরা শুরু করে দিতে চাই, আর কারও কাছে আমাদের টাকাও চাইতে হবে না। আমরা প্রাথমিকভাবে নিয়ত করেছি পানির বোতলের নাম দেব ‘ইমাম’।’


আরও পড়ুন: বর্তমানে মুসলমান ও বাংলাদেশি জাতি-গোষ্ঠীর ঐক্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: ধর্ম উপদেষ্টা

 

যাকাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মোবাইলে একটি অ্যাপস করা হয়েছে, যার কার্যক্রমের রিভিশন চলছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে যে কেউ ঘরে বসে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যাকাত ফান্ডে টাকা দিতে পারবে।’


সবথেকে বেশি যাকাত চট্টগ্রামে এবং সব থেকে কম নীলফামারীতে আদায় হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইমামরা মসজিদে যাকাতের বিষয়ে মুসল্লিদের বলবেন। আমাদের এখান থেকে এক টাকাও এদিক সেদিক হওয়ার সুযোগ নেই।’


তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যারা দীর্ঘদিন কোনো কারণ ছাড়া পদোন্নতি পাননি তাদের তা দেয়া হবে। অনেক শূন্য পদও আছে তারমধ্যে কিছু পদও পূরণ করা হবে। কারও কোনো অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমাকে অথবা ডিজিকে দেবেন। আমরা মন্ত্রণালয়কে সচল, প্রাণবন্ত, অ্যাকটিভ করতে চাই। ইমাম মুয়াজ্জিনরা হচ্ছে তৃণমূলে ইসলামের প্রতিনিধি, সামাজিক শক্তি। সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা গেলে, দেশের জন্য বিরাট শক্তিতে পরিণত হবে। ধর্মের নামে হানাহানি আমাদের জন্য বেদনার।’


আরও পড়ুন: একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে গুম ও আয়নাঘরের অস্তিত্ব লজ্জাজনক: ধর্ম উপদেষ্টা


সবশেষে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘হিন্দু, খ্রিস্টান, মুসলমান, বৈদ্যসহ বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী আমরা সবাই দেশের নাগরিক। প্রত্যেকের অধিকার সমান, আর এই অধিকার সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ-বৈষম্যহীন সমাজ- রাষ্ট্র উপহার দিতে চাই। আগামী দিনে যারা আসবেন তাদের পথ সুগম করতে চাই।’


বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিদুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন গভর্নর বোর্ডের অব গভর্নরস ও চরমোনাই আহছানাবাদ রশিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর বোর্ডের অব গভর্নরস ও পটুয়াখালী ওয়ায়েজিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হকসহ প্রমুখ। 


এ সময় জেলার দুই শতাধিক মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।


সভা শেষে উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকার আল জামিয়া আল ইসলামিয়া আল মাহমুদিয়া মাদ্রাসা ও পরে চরমোনাই মাদ্রসা পরিদর্শন করেন।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন