শাহেরা বেগম। বছর দুয়েক আগে পা ভাঙায় আর কাজ করতে পারেন না; দুই ছেলের দিনমজুরিতে মাসে যেটুকু ঘরে আসে তাতেই কোনোমতে ডালে ভাতে দিন যায় তিনজনের। শাহেরা বলেন, ছেলেরা যে টাকা পায় সেটা দিয়েই কোনোমতে সংসার চলে। প্রতিদিন মাছ-মাংস খাওয়ার সামর্থ্য নেই।
একই অবস্থা সুমাইয়া কিংবা সালামারও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ভ্যানচালক স্বামীর আয়ে সংসার খরচ চালাতেই হিমশিম অবস্থা সুমাইয়ার। সেখানে ৩ সদস্যের পরিবারে তিন বেলা খাবার জোটানো তার কাছে যেন বিলাসিতা। তিনি বলেন, দিন আনি দিন খাই, সপ্তাহে দুইবার মাছ কিনতে পারি, মাসে একবার হয়ত মাংস। ভালো খাবার নিয়মিত খাওয়ার সাধ্য নেই।
আরও পড়ুন: সবজি কিনতেই পকেট ফাঁকা!
চায়ের সঙ্গে একটুকরা কেক কিংবা পাউরুটি। সালমা আর তার দেড় বছর বয়সি ছেলের সকালের খাবার এটুকুই। সালমা বলেন, সকালে চা-রুটি খেয়েই কাটাতে হয়। ভালো কিছু কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্য নেই।
তাদের মতো এমন অনেক পরিবার রাজধানীতেই আছে, যাদের উদর পূর্তির কাছে তেমন একটা পাত্তা পায়না পুষ্টিকর খাবারের চিন্তা। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য বলছে, বাংলাদেশের ৭ কোটি ৭১ লাখ মানুষ এখনো বঞ্চিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার থেকে। অপুষ্টির শিকার ১০ শতাংশেরও বেশি।
অথচ মার্কিন কৃষি দফতরের তথ্য বলছে, চাল-সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সুজলা-সফলা বাংলাদেশ। আর মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়। উৎপাদনের এমন তৃপ্তির পরিসংখ্যানের মধ্যেই রাজধানীর ফকিন্নি বাজার থেকে কেনা ১০ টাকার কাটা সবজিতেই পুষ্টির জোগান খুঁজতে হয় অনেকেই।
নিম্ন আয়ের মানুষেরা বলছেন, দিন দিন খরচ বাড়ছে; তবে আয় বাড়ছে না সেভাবে। তাই যেখানে কম দামে পণ্য মেলে সেখান থেকেই কিনতে হয়। এসব পণ্যের মান খারাপ হলেও কিছু করার থাকে না।
খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির দৌড়ে হাঁপিয়ে জনগোষ্ঠীর পাতে পুষ্টির নিশ্চয়তা দিতে না পারার কারণ হিসেবে সঠিক তথ্য সরবরাহের অভাবকে দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের যুক্তি, তথ্যের অভাবে কখনও কখনও পর্যাপ্ত উৎপাদনের পরও খাদ্যের সরবরাহ সংকট পড়তে হয় ভোক্তাকে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঠিক জানা দরকার কোথায় অভাব রয়েছে। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া জরুরি। যারা তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং যারা খাবার সরবরাহ বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন, তাদের কাছে তথ্যটি পৌঁছানো উচিত। তারপর সরকার ও স্থানীয় সরকার, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় যদি আমরা খাদ্য, অর্থ এবং নিরাপত্তার জোগান একত্রিতভাবে পরিচালনা করি, তাহলে এই ধরনের অসংগতি নিশ্চয়ই কমে যাবে।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় নকল ওষুধ তৈরির কারখানা, পরিচালকের কারাদণ্ড-জরিমানা
খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিতে তাই চাহিদা-জোগান ও উৎপাদনের সুষম কাঠামো তৈরির তাগিদ দিচ্ছে ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাব। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির জানান, সমস্যা সমাধানে প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করতে হবে। কারণ রাজশাহীর বাজারে যে সবজির দাম কেজিতে ২০-২৫ টাকা, সেটি ঢাকার কারওয়ান বাজারে পৌঁছে ব্যবসায়ীদের কাছে কেজিতে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। এরপর বাজারে বিক্রির সময় কেজি দামে দাম বেড়ে ৫০ টাকা হয়, আর হাতিরপুল বাজারে পৌঁছালে সেটি ৭০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি আরও বলেন, এভাবে পণ্য হাত বদলে অনেক সময় পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ অনেক কৃষক জানেন না তাদের কতটুকু কীটনাশক ব্যবহার করা দরকার, অথবা জানলেও বেশি ব্যবহার করেন যাতে দ্রুত ক্ষতি রোধ করা যায়। এরপর মধ্যস্বত্বভোগীর হাতে এসে এই সবজি কিছুসময়ের জন্য অনিরাপদ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আমাদের প্লেটে পৌঁছানোর আগে এই লম্বা চেইনের মধ্যে যে কোনো সময় সবজি নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এমন বাস্তবতার মধ্যেই সমৃদ্ধ আগামীর জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করা তাগিদ দিয়ে 'উন্নত খাদ্য এবং উন্নত ভবিষ্যতের জন্য হাতে হাত রেখে' প্রতিপাদ্যে এবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস।
]]>
১ সপ্তাহে আগে
৩







Bengali (BD) ·
English (US) ·