উম্মাহর কল্যাণে দায়িত্বশীল মুসলমান হও: ড. ওমর সুলেইমান

৩ সপ্তাহ আগে
ইসলাম একজন মুমিনকে শুধু নামাজ, রোজা বা বাহ্যিক ইবাদতে সীমাবদ্ধ রাখে না; বরং তাকে আহ্বান জানায় উচ্চতর নৈতিকতা, জ্ঞান, দায়িত্ববোধ ও সমাজসেবার পথে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্য স্থির করা, এই চেতনা একজন মুসলমানকে সাধারণ মান থেকে উৎকর্ষের পথে নিয়ে যায়। ড. ওমর সুলেমানের খুতবায় এই বিষয়টিই গুরুত্ব পায়, মাঝারি মানে সন্তুষ্ট না থেকে, আল্লাহর জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানোর প্রেরণা।

ড. ওমর সুলেমানের খুতবার মূল বার্তাটি হলো, ঈমানে উচ্চ লক্ষ্য স্থির করা ইসলামের অন্যতম কেন্দ্রীয় নীতি। ‘মাঝারি মান’ বা সাধারণ স্তরে সন্তুষ্ট না থেকে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও দৃঢ় সংকল্পে এগিয়ে যাওয়া উচিত। এই খুতবা এক ধরনের নৈতিক পথনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে, যা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে নিজের ইবাদত, চরিত্র ও সমাজের উন্নয়নের মাধ্যমে মহান লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে।

 

ঈমানে উচ্চ লক্ষ্য আখিরাতের প্রস্তুতি

 

ঈমান কেবল বিশ্বাস নয়, এটি একটি জীবনদর্শন যা আখিরাতের প্রস্তুতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ, সুষম লক্ষ্য নির্ধারণ ও গভীর চিন্তাশীলতা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ দিক। একজন মুমিনকে হতে হবে আত্মনিয়ন্ত্রিত, জ্ঞানপুষ্ট ও নৈতিকভাবে দৃঢ়, যেন তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ঈমানের প্রতিফলন ঘটে।

 

আরও পড়ুন: নবীজির প্রিয় স্ত্রী

 

মাঝারি মান নয়, মহান লক্ষ্য

 

মধ্যম মানে থেমে থাকা নয়; বরং অধিক চিন্তা, গভীর আত্মপ্রচেষ্টা ও অবিরাম অগ্রগতি ইসলামের শিক্ষা। সাফল্যের প্রকৃত মানদণ্ড হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও উম্মাহর কল্যাণ, কেবল সংসারিক সুখ বা আরামের নয়। উচ্চ লক্ষ্য মানে নিজেকে উন্নত ইবাদত, আত্মসংযম ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে গড়ে তোলা।

 

খাঁটি ইবাদত ও সামাজিক অবদান

 

ইবাদত কেবল ব্যক্তিগত অনুভূতির বিষয় নয়; এর উদ্দেশ্য হলো নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা। ইসলাম শেখায়, ন্যায্যতা, সহানুভূতি ও সামাজিক দায়িত্ববোধ, এই গুণগুলোই ঈমানের বাস্তব প্রকাশ। একজন প্রকৃত মুমিন তার সমাজে আল্লাহর গুণাবলীর ছায়া হয়ে কাজ করে।

 

উম্মাহর প্রতি দায়বদ্ধতা

 

ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণের সময় উম্মাহর ঐক্য, লাভ ও উন্নয়নকে বিবেচনায় রাখা জরুরি। নেতৃত্ব, শিক্ষা, দান-খয়রাত ও কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা প্রতিটি মুমিনের নৈতিক দায়িত্ব। ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য প্রকাশ পায় সমষ্টিগত কল্যাণে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে।

 

উচ্চ লক্ষ্য বাস্তবায়নের ধাপ

 

পরিকল্পনা ও ধারাবাহিকতা: দৈনন্দিন ইবাদত, শিক্ষা, পেশা ও সমাজসেবায় ধারাবাহিক প্রচেষ্টা বজায় রাখা প্রয়োজন। আত্মসমীক্ষা ও প্রতিফলন, নিজের কাজ, ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য কতটা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও উম্মাহর কল্যাণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা উচিত।

 

শিক্ষা ও নেতৃত্ব: জ্ঞান আহরণ, নৈতিক দিকনির্দেশনা প্রদান এবং তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে উদ্বুদ্ধ করা উচিত। নৈতিকতা ও সহানুভূতি: সমবেদনা, ন্যায্যতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ বজায় রাখা, এগুলোই ইসলামী চরিত্রের মূল ভিত্তি।

 

আরও পড়ুন: নবীজির প্রিয় ও পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে সিরাতের বই ‘নবীজির প্রিয় ১০০’

 

এই খুতবার সারমর্ম হলো, ঈমানকে কেবল ব্যক্তিগত বিশ্বাস নয়, বরং সমাজ-উন্নয়নের একটি জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা। মাঝারি মান অতিক্রম করে উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ, খাঁটি নৈতিকতা বজায় রাখা এবং উম্মাহর কল্যাণে সক্রিয় অংশগ্রহণ, এই তিনটি মূল স্তম্ভেই নিহিত রয়েছে একজন মুসলিমের প্রকৃত সাফল্য ও ইসলামী জীবনের সারাংশ। আল্লাহ তাআলা বলেন, 

 

আল্লাহ তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন, যারা ঈমান এনেছে ও জ্ঞান অর্জন করেছে। (সুরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত ১১)


 

ওমর সুলেইমান (জন্ম: ১৯৮৬) একজন মার্কিন মুসলিম পণ্ডিত, নাগরিক অধিকার নেতা, লেখক এবং বক্তা। তিনি ইয়াক্বীন ইনস্টিটিউট ফর ইসলামিক রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং সাউদার্ন মেথোডিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের অ্যাডজেক্ট প্রফেসর। তিনি বর্তমানে ভ্যালি রঞ্চ ইসলামিক সেন্টারের আবাসিক স্কলার এবং শান্তি ও ন্যায়বিচারের জন্য পাদ্রিদের একটি বহু-বিশ্বাসী জোট, থ্যাঙ্কস-গিভিং স্কোয়ারে ডালাস বিলিবিং ফেইথ কো-চেয়ার এমেরিটাস। সূত্র: ইন্টারনেট

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন