বাজেটের আকার বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে উন্নয়ন ব্যয়ও। ১৯৭২ সালের ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট এখন প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকায় ঠেকেছে। উন্নয়ন ব্যয়ও ৩ লাখ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই করছে, যেখানে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি দুই থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকা। এই বরাদ্দের অর্থ প্রতি বছর ব্যয় হয় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে।
তবে অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ, অর্থের অপচয় ও টেকসই কাজ না হওয়ার অভিযোগ হরহামেশা। প্রবাদ আছে ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’। এসব নিয়ে কী ভাবছে জনগণ?
আরও পড়ুন: ২০২৫-২৬ অর্থবছর / বাজেট পেশ ২ জুন, কীভাবে হবে উপস্থাপন?
সাধারণ মানুষ বলছেন, একটি প্রকল্পে বেশ কয়েকবার সময় ও বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয় দুর্নীতি। এটি বন্ধ করা গেলে সেই বাড়তি অর্থ দিয়ে অন্য কোনো প্রকল্প করা যায়। যেকোনো প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া অর্থ যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার হয়, সেজন্য কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে। এতে কমে আসবে অনিয়ম-দুর্নীতি।
তাদের কথার রেশ ধরে একটি ধারণা দেয়া যাক। ধরা যাক, ৫ বছর টেকসই হবে এমন সড়ক তৈরিতে বাজেট বরাদ্দ ১০০ টাকা। কিন্তু বাস্তবায়ন পর্যায়ে ৩০ টাকাই অনিয়ম, অপচয় হলো। ফলে নির্ধারিত মান বজায় রেখে কাজ করতে না পারায় ৩ বছরেই সড়কটি সংস্কারের প্রয়োজন। এতে সড়কটির মেয়াদ শেষের আগেই আবারও বরাদ্দ দিতে হলো।
বাড়ল খরচ, বাড়ল উন্নয়ন বাজেট। সুবিধাভোগী হলো নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী। বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণের করের টাকার টেকসই ব্যবহার করা গেলে দেশ এগিয়ে যেত আরও অনেক দূর। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বেশিরভাগ প্রকল্পে যেসব উপাদান ব্যবহার করে অবকাঠামো নির্মাণ করার কথা, সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে টেকসই হচ্ছে না প্রকল্পগুলো।
পরীবিক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করা তাগিদ দিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে স্বচ্ছতা আনতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে জনগণের মধ্যেও।
আরও পড়ুন: পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জনগণের অর্থ বা ঋণ দিয়ে চলে প্রকল্প। কিন্তু ঋণের বোঝাও পরবর্তীতে জনগণের ঘাড়ে এসেই পড়ে। তবে বিগত সময়ে ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ৫০০ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। এটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রকল্প স্বচ্ছ ও উপযুক্তভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
অপচয়-অনিয়ম কমাতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নতুন অর্থবছরে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেয়া হবে না। বাস্তবায়নযোগ্য একটি বাজেট দেয়া হবে এবার। যেখানে কথার কোনো ফুলঝুড়ি থাকবে না।
উল্লেখ্য, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ১ হাজার ১৪২টি প্রকল্প নিয়ে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম।
]]>