তার বিরুদ্ধে শুধু ঘুষ নেয়াই নয়, ভূমি অফিসে সেবা নিতে যাওয়া লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ, টাকা হলে অনিয়মকে নিয়ম, চাহিদামতো ঘুষ না পেলে দিনের পর দিন সেবাগ্রহীতাদের হয়রানির শিকার হতে হয়।
এদিকে, এমন অসংখ্য অভিযোগের বিষয় জানাজানি হলে তার মধ্যে একটি ঘটনায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন এ তহসিলদার আব্দুল্লাহ আল ওয়াকিল।
আরও পড়ুন: ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের দুর্নীতি: তদন্তের নির্দেশ আদালতের
উত্তর আলগী ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের ভুক্তভোগী মামুন ছৈয়াল জানান, কমলাপুর মৌজায় ১২৬ শতাংশ জমির খাজনা কাটার জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আসেন। ভূমি অফিসের তহসিলদার কেলকুলেটর টিপে জানান তার জমির খাজনা এসেছে ৭৫ হাজার টাকা। ৭৫ হাজার টাকা না দিলে তার জমি সরকার খাস জমি করে নিয়ে যাবেন। তখন সেবা গ্রহীতা রাজ্জাক তহসিলদারের কাছে কাকুতি মিনতি করেন টাকা কমানোর জন্য। তখন তিনি তাকে রুক্ষ ভাষায় বলেন, এটা সরকারি ফি এ টাকা না দেয়ার কোনা সুযোগ নাই। ওই দিন খাজনা না কাটতে পেরে তিনি বাড়ি চলে যান। পরদিন আবার অফিসে এলে তিনি তাকে টাকা দিতে বলেন। তখন তিনি তাকে এত টাকা দিতে পারবেন না জানালে তহসিলদার তাকে ৪৫ হাজার টাকা দিতে বলেন। তিনি ২৫ হাজার টাকা দিলে তিনি খাজনা রশিদ কেটে দেন। অক্ষর জ্ঞানহীন বয়স্ক মানুষ খাজনা রশিদ নিয়ে বাড়িতে গেলে তার পরিবারের লোকজন দেখেন খাজনা রশিদে মাত্র ৩৮১৬ টাকার খাজনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তিনি এলাকার লোকজনকে জানালে পরে তাকে ২৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন।
আরেক ভুক্তভোগী আব্দুর রাজ্জাক পাটওয়ারী বলেন, ‘আমি ভূমি অফিসে গেলে ওনারা আমার কাছ থেকে খাজনা বাবদ ৪৮ হাজার টাকা দাবি করে। আমি স্যারকে বলি আমি একজন গরিব মানুষ, আমি এত টাকা কোথায় থেকে দেব। তখন আমি অফিস থেকে বের হয়ে আমার বড় ভাই শফিক পাটওয়ারীকে জানালে উনি তাদের সাথে কথা বললে, অফিসার আমাকে ধমক দিয়ে বলে আপনার ১ টাকাও কমানো যাবে না। আমি সেখান থেকে আইসা পড়তে গেল, তখন কিছু লোক আমাকে বলে ওনাদের এক্সটা ৩/৪ হাজার টাকা দিলে কমানো যাবে। তখন আমি ওনাদের দুই হাজার টাকা দিলে ৩০ হাজার টাকায় আমার জমির খাজনা কাটে। এ বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ২/৩ জন লোক আমাকে নিয়ে তহসিলদারের সাথে কথা বলিয়ে ৩০ হাজার টাকার খাজনা কেটে ৬১০ টায় জমির খাজনা কাটার রশিদ আমাকে দেয়।’
আরও পড়ুন: রাজশাহী এলজিইডি কার্যালয়ে ঘুষের অভিযোগে দুদকের অভিযান
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, উত্তর আলগী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে টাকা হলে সব ধরনের কাজ করানো সম্ভব। অবৈধ কাগজও তিনি বৈধ করে দিতে পারেন ওই কর্মকর্তা। নামজারি থেকে শুরু করে খাজনা সকল কিছুতেই তার দুর্নীতি ও অনিয়ম চরম সীমারেখার বাইরে চলে গেছে। তার এ অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। টাকার বিনিময়ে একের জমিন অন্যজনের নামে নামজারি করার ফলে পরস্পরের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি হয়ে কোটের বারান্দায় দৌড়াতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। এলাকার লোকজন এ তহসিলদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
অভিযোগ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) আব্দুল্লাহ্ আল ওয়াকিল বলেন, ‘এখন এইগুলো অনলাইনে কাটা যায়। এই খাজনার টাকা আবার আমি সংশোধন করে দিয়েছি। ওনারা বেশি টাকা দিয়ে খাজনা কেটেছেন। তাই আমি আবার সংশোধন করে তাদের টাকা ফেরত দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা নাজনীন তৃষার কাছে জানতে চাওয়া হলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এখনও কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করেননি। ভুক্তভোগী বা সংক্ষুব্ধ কেউ লিখিত অভিযোগ করলে, আমি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’