ঈদ আনন্দ নেই শহীদ গণির পরিবারে

৩ সপ্তাহ আগে
ঢাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত আবদুল গণি শেখের (৪৫) পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আবদুল গণি। তাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন তার স্ত্রী লাকি আক্তার, উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া ছেলে আলামিন শেখ ও ছয় বছর বয়সি মেয়ে জান্নাত।

আবদুল গণি রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকার আবদুল মজিদ শেখের ছেলে।

 

স্বজনরা জানান, রাজধানীর গুলশানে-২ সিক্সসিজন নামক আবাসিক হোটেলের কারিগরি বিভাগে কাজ করতেন আবদুল গণি। গত ১৯ জুলাই সকালে ঢাকার উত্তর বাড্ডার গুপীপাড়ার বাসা থেকে কর্মস্থলের দিকে হেঁটে রওনা হন গণি। পথে শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকায় সংঘাতের মধ্যে পড়েন তিনি। সংঘর্ষ চলাকালে তার মাথার ডান পাশে গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ হয়ে দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় পড়ে থাকেন তিনি। পরে স্থানীয় লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

 

গণির স্ত্রী লাকি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী বছরে দুই ঈদের এক ঈদে বাড়িতে আসতেন। গত ঈদুল আজহায় বাড়িতে আসতে পারেননি। বলেছিলেন, ঈদুল ফিতরে বাড়িতে আসবেন। বাড়িতে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ঈদের আনন্দ করবেন। কোরবানির ঈদে বাড়িতে আসতে না পারলেও ঢাকা থেকে মেয়ের জন্য জামা-জুতা, ছেলের জন্য শার্ট-গেঞ্জি ও আমার জন্য শাড়ি কিনে পাঠিয়েছিলেন। ফোন দিলেই বলতেন এবার ঈদুল ফিতরের সপ্তাহখানেক আগে বাড়ি আসবেন। কিন্তু গত বছরের ১৯ জুলাই আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের জীবনে আর কোনদিন সেই ঈদের আনন্দ আসবে না, আর ঈদ নেই আমাদের।’

 

আরও পড়ুন: গণঅভ্যুত্থানে শহীদ জসিমের পরিবারকে ঈদ উপহার দিলো পটুয়াখালী বিএনপি

 

তিনি আরও বলেন, ‘একটি পরিবারের অভিভাবক না থাকলে কেমন চলে সেটা সবাই জানে। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া ছেলে আর ছোট মেয়েকে নিয়ে আমি কষ্টে আছি। বাবা ছাড়া সন্তানদের জীবনে প্রথম ঈদ হবে এবার। ঈদের দিন আমার ছেলে-মেয়ের জন্য সেমাই রান্না করবো। ওদের শহীদ বাবার জন্য ছোট পরিসরে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবো।’

 

গণি শেখের ছেলে আলামিন শেখ বলেন, ‘এই ঈদটা আমাদের একসঙ্গে করার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বাবা আজ নেই। বাবাকে ছাড়া আমাদের পরিবারে কখনো ঈদের আনন্দ আসবে না। যারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই।’

 

আন্দোলনে রাজবাড়ী জেলার তিনজন ঢাকায় নিহত হয়েছেন। তাদের ঈদ উদযাপন নিয়ে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘আমরা দুটি পরিবারের জন্য রোজায় ইফতার সামগ্রী দিয়েছি। একটি পরিবার ঢাকায় থাকে, তাদের খোঁজ নিয়েছি। আবদুল গণির ইচ্ছা ছিল তার নির্মাণাধীন ভবনটি ঈদের আগে কাজ শেষ করা। শহীদ গণির সেই স্বপ্ন পূরণে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। গণির ঘর নির্মাণের কাজ চলমান। আমরা চেষ্টা করছি শহীদ পরিবারগুলোর পাশে থাকতে। তাদের স্বজন হারিয়ে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা আমরা হয়তো পূরণ করতে পারব না। তবে ঈদে তাদের যে কষ্ট হবে আমরা সেটা ভাগ করে নেব।’

 

আরও পড়ুন: জুলাই অভ্যুত্থান / মাদারীপুরে ৯ শহীদ পরিবারকে তারেক রহমানের সহায়তা

 

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার শহীদ গণির পরিবারসহ নিহত মোট তিন পরিবারের প্রত্যেককে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২ লাখ টাকার চেক দেয়া হয়েছে। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকেও সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে।’  

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন